অষ্টম শ্রেনী ইসলাম শিক্ষা
পঞ্চম অধ্যায়: আদর্শ জীবনচরিত
হযরত সুলায়মান (আ.)
১. প্রশ্ন: হযরত সুলায়মান (আ.) কোন নবির পুত্র ছিলেন?
* ক) হযরত মুসা (আ.)
* খ) হযরত দাউদ (আ.)
* গ) হযরত ইয়াকুব (আ.)
* ঘ) হযরত ইবরাহিম (আ.)
সঠিক উত্তর: খ) হযরত দাউদ (আ.)
ব্যাখ্যা: হযরত সুলায়মান (আ.) ছিলেন আল্লাহ তায়ালার প্রিয় নবি ও বিজ্ঞ শাসক হযরত দাউদ (আ.)-এর সুযোগ্য পুত্র। তিনি পিতার মৃত্যুর পর নবুয়ত ও রাজত্ব লাভ করেন।
২. প্রশ্ন: হযরত সুলায়মান (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা কোন বিশেষ ক্ষমতা দান করেছিলেন?
* ক) মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা
* খ) চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করার ক্ষমতা
* গ) পশু-পাখি ও বাতাসের উপর নিয়ন্ত্রণ
* ঘ) সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ক্ষমতা
সঠিক উত্তর: গ) পশু-পাখি ও বাতাসের উপর নিয়ন্ত্রণ
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা হযরত সুলায়মান (আ.)-কে বহুবিধ নিয়ামত দান করেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো জিন, মানুষ, পশু-পাখি এবং বাতাসের উপর নিয়ন্ত্রণ। তিনি পশু-পাখিদের ভাষা বুঝতেন।
৩. প্রশ্ন: ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদুল আকসা’ প্রথম কে নির্মাণ শুরু করেন এবং কে তা সম্পন্ন করেন?
* ক) হযরত আদম (আ.) শুরু করেন, হযরত নূহ (আ.) সম্পন্ন করেন
* খ) হযরত ইবরাহিম (আ.) শুরু করেন, হযরত ইসমাইল (আ.) সম্পন্ন করেন
* গ) হযরত দাউদ (আ.) শুরু করেন, হযরত সুলায়মান (আ.) সম্পন্ন করেন
* ঘ) হযরত ইয়াকুব (আ.) শুরু করেন, হযরত ইউসুফ (আ.) সম্পন্ন করেন
সঠিক উত্তর: গ) হযরত দাউদ (আ.) শুরু করেন, হযরত সুলায়মান (আ.) সম্পন্ন করেন
ব্যাখ্যা: বাইতুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন হযরত দাউদ (আ.)। তাঁর মৃত্যুর পর হযরত সুলায়মান (আ.) জিনদের সাহায্যে এই মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।
৪. প্রশ্ন: সাবার রানি বিলকিস কোন নবির সময়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন?
* ক) হযরত মুসা (আ.)
* খ) হযরত দাউদ (আ.)
* গ) হযরত সুলায়মান (আ.)
* ঘ) হযরত ঈসা (আ.)
সঠিক উত্তর: গ) হযরত সুলায়মান (আ.)
ব্যাখ্যা: সাবার রানি বিলকিস প্রথমে সূর্যপূজারী ছিলেন। হযরত সুলায়মান (আ.)-এর প্রজ্ঞা, ক্ষমতা এবং হুদহুদ পাখির মাধ্যমে প্রেরিত দাওয়াত পেয়ে তিনি অবশেষে হযরত সুলায়মান (আ.)-এর নিকট আত্মসমর্পণ করেন ও ইসলাম গ্রহণ করেন।
হযরত মুসা (আ.)
৫. প্রশ্ন: হযরত মুসা (আ.) কোন অত্যাচারী বাদশাহের সময়ে জন্মগ্রহণ করেন?
* ক) নমরুদ
* খ) ফিরাউন
* গ) আবরাহা
* ঘ) জালুত
সঠিক উত্তর: খ) ফিরাউন
ব্যাখ্যা: হযরত মুসা (আ.) মিসরের অত্যাচারী বাদশাহ ফিরাউনের রাজত্বকালে বনি ইসরাইল বংশে জন্মগ্রহণ করেন। ফিরাউন বনি ইসরাইলের পুত্রসন্তানদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল।
৬. প্রশ্ন: আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.)-কে কোন দুটি প্রধান মুজিযা (অলৌকিক নিদর্শন) দান করেছিলেন?
* ক) চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করা ও মৃতকে জীবিত করা
* খ) লাঠি সাপে পরিণত হওয়া ও হাতের শুভ্র আলো
* গ) পশু-পাখির ভাষা বোঝা ও বাতাস নিয়ন্ত্রণ করা
* ঘ) অদৃশ্য হওয়া ও শূন্যে ওড়া
সঠিক উত্তর: খ) লাঠি সাপে পরিণত হওয়া ও হাতের শুভ্র আলো
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা (আ.)-কে অনেক মুজিযা দান করেছিলেন, যার মধ্যে প্রধান দুটি ছিল তাঁর হাতের লাঠি নিক্ষেপ করলে তা বিশাল সাপে পরিণত হওয়া এবং তাঁর ডান হাত বগলে রেখে বের করলে তা উজ্জ্বল আলোকময় হয়ে যাওয়া।
৭. প্রশ্ন: হযরত মুসা (আ.)-এর উপর কোন আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছিল?
* ক) যাবুর
* খ) ইনজিল
* গ) তাওরাত
* ঘ) কুরআন
সঠিক উত্তর: গ) তাওরাত
ব্যাখ্যা: হযরত মুসা (আ.) আল্লাহ তায়ালার একজন বিশিষ্ট রাসুল ছিলেন। তাঁর উপর আল্লাহ তায়ালা ‘তাওরাত’ নামক আসমানি কিতাব নাজিল করেন।
৮. প্রশ্ন: ফিরাউন তার দলবলসহ কোথায় সলিল সমাধি লাভ করে?
* ক) নীলনদে
* খ) লোহিত সাগরে
* গ) টাইগ্রিস নদীতে
* ঘ) জর্ডান নদীতে
সঠিক উত্তর: খ) লোহিত সাগরে
ব্যাখ্যা: হযরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারী বনি ইসরাইলকে ধাওয়া করার সময় ফিরাউন ও তার বিশাল সৈন্যবাহিনী লোহিত সাগরে (বাহরে কুলযুম) ডুবে মারা যায়। আল্লাহ তায়ালা সাগরের পানিকে বিভক্ত করে মুসা (আ.) ও তাঁর লোকদের জন্য রাস্তা করে দিয়েছিলেন এবং ফিরাউন প্রবেশ করার পর পানি আগের মতো হয়ে যায়।
হযরত ঈসা (আ.)
৯. প্রশ্ন: হযরত ঈসা (আ.) কোন অলৌকিক উপায়ে জন্মগ্রহণ করেন?
* ক) সাধারণ মানব শিশুর মতো
* খ) শুধুমাত্র পিতার মাধ্যমে
* গ) পিতা ছাড়া আল্লাহর বিশেষ কুদরতে কুমারী মায়ের গর্ভে
* ঘ) দত্তক পুত্র হিসেবে
সঠিক উত্তর: গ) পিতা ছাড়া আল্লাহর বিশেষ কুদরতে কুমারী মায়ের গর্ভে
ব্যাখ্যা: হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর বিশেষ কুদরতে পিতা ছাড়াই কুমারী বিবি মারইয়াম (আ.)-এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। এটি ছিল তাঁর অন্যতম মুজিযা।
১০. প্রশ্ন: হযরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা কোন কোন মুজিযা দান করেছিলেন?
* ক) চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করা
* খ) মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করা, কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করা
* গ) সমুদ্রকে বিভক্ত করা
* ঘ) পাহাড়কে স্থানান্তরিত করা
সঠিক উত্তর: খ) মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি দান করা, কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করা
ব্যাখ্যা: হযরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা অনেক মুজিযা দিয়েছিলেন, যেমন – তিনি আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করতে পারতেন, জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করতে পারতেন এবং মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে ফুঁ দিলে তা জীবন্ত পাখি হয়ে উড়ে যেত।
১১. প্রশ্ন: হযরত ঈসা (আ.)-এর উপর কোন আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছিল?
* ক) তাওরাত
* খ) যাবুর
* গ) ইনজিল
* ঘ) কুরআন
সঠিক উত্তর: গ) ইনজিল
ব্যাখ্যা: হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল ছিলেন এবং তাঁর উপর ‘ইনজিল’ নামক আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল।
১২. প্রশ্ন: খ্রিস্টানরা হযরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে কোন ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ করে?
* ক) তিনি আল্লাহর নবি ছিলেন না
* খ) তিনি আল্লাহর পুত্র এবং তিন খোদার একজন (ত্রিত্ববাদ)
* গ) তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এবং তিনি আর ফিরে আসবেন না
* ঘ) তিনি সাধারণ মানুষ ছিলেন
সঠিক উত্তর: খ) তিনি আল্লাহর পুত্র এবং তিন খোদার একজন (ত্রিত্ববাদ)
ব্যাখ্যা: খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক বিরাট অংশ হযরত ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র এবং খোদার অংশীদার মনে করে (ত্রিত্ববাদ)। ইসলাম এই ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর সম্মানিত নবি ও রাসুল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কুরআন অনুযায়ী, আল্লাহ তাঁকে ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে সশরীরে আসমানে তুলে নিয়েছেন এবং কিয়ামতের পূর্বে তিনি পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন।
হযরত মুহাম্মদ (স.)
১৩. প্রশ্ন: হযরত মুহাম্মদ (স.) কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
* ক) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে
* খ) ৬১০ খ্রিস্টাব্দে
* গ) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে
* ঘ) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে
সঠিক উত্তর: ক) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে
ব্যাখ্যা: সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।
১৪. প্রশ্ন: কত বছর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (স.) নবুয়ত লাভ করেন?
* ক) ২৫ বছর
* খ) ৩০ বছর
* গ) ৩৫ বছর
* ঘ) ৪০ বছর
সঠিক উত্তর: ঘ) ৪০ বছর
ব্যাখ্যা: হযরত মুহাম্মদ (স.) ৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে প্রথম ওহি লাভ করেন এবং নবুয়ত প্রাপ্ত হন।
১৫. প্রশ্ন: ‘আল-আমিন’ কার উপাধি ছিল এবং এর অর্থ কী?
* ক) হযরত আবু বকর (রা.)-এর, অর্থ সত্যবাদী
* খ) হযরত উমর (রা.)-এর, অর্থ ন্যায়পরায়ণ
* গ) হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর, অর্থ বিশ্বাসী
* ঘ) হযরত আলি (রা.)-এর, অর্থ সাহসী
সঠিক উত্তর: গ) হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর, অর্থ বিশ্বাসী
ব্যাখ্যা: নবুয়ত লাভের পূর্বেই হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও বিশ্বস্ততার জন্য মক্কার লোকদের কাছে ‘আল-আমিন’ (বিশ্বাসী) ও ‘আস-সাদিক’ (সত্যবাদী) উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
১৬. প্রশ্ন: মহানবি (স.)-এর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ মুজিযা কোনটি?
* ক) ইসরা ও মিরাজ
* খ) চন্দ্র দ্বিখণ্ডিতকরণ
* গ) আল-কুরআন
* ঘ) অল্প খাদ্যে বহু লোকের আহার
সঠিক উত্তর: গ) আল-কুরআন
ব্যাখ্যা: মহানবি (স.)-কে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য মুজিযা দান করেছিলেন। তবে তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরন্তন মুজিযা হলো মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, যা মানবজাতির জন্য একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান।
১৭. প্রশ্ন: মদিনা সনদের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
* ক) শুধুমাত্র মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা
* খ) মদিনায় একটি শক্তিশালী সামরিক জোট গঠন করা
* গ) মদিনায় বসবাসরত বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা
* ঘ) কুরাইশদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা
সঠিক উত্তর: গ) মদিনায় বসবাসরত বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা
ব্যাখ্যা: মদিনা সনদ ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান। এর মাধ্যমে মহানবি (স.) মদিনায় বসবাসরত মুসলমান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য গোত্রের মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তিতে একটি সম্মিলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮. প্রশ্ন: মহানবি (স.) কোন যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছিলেন?
* ক) বদরের যুদ্ধে
* খ) উহুদের যুদ্ধে
* গ) খন্দকের যুদ্ধে
* ঘ) তাবুকের যুদ্ধে
সঠিক উত্তর: খ) উহুদের যুদ্ধে
ব্যাখ্যা: উহুদের যুদ্ধে এক পর্যায়ে মুসলমানদের সাময়িক বিপর্যয়ের সময় কাফিরদের আক্রমণে মহানবি (স.)-এর দাঁত শহিদ হয় এবং তিনি গুরুতর আহত হন।
হযরত আয়েশা (রা.)
১৯. প্রশ্ন: হযরত আয়েশা (রা.) কার কন্যা ছিলেন?
* ক) হযরত উমর (রা.)-এর
* খ) হযরত আবু বকর (রা.)-এর
* গ) হযরত উসমান (রা.)-এর
* ঘ) হযরত আলি (রা.)-এর
সঠিক উত্তর: খ) হযরত আবু বকর (রা.)-এর
ব্যাখ্যা: উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর কন্যা এবং মহানবি (স.)-এর অন্যতম প্রিয়তমা স্ত্রী।
২০. প্রশ্ন: হযরত আয়েশা (রা.) কী কারণে ইসলামের ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়?
* ক) তাঁর দানশীলতার জন্য
* খ) তাঁর সাহসিকতার জন্য
* গ) তাঁর অসাধারণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং হাদিস বর্ণনার জন্য
* ঘ) তাঁর কাব্য প্রতিভার জন্য
সঠিক উত্তর: গ) তাঁর অসাধারণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং হাদিস বর্ণনার জন্য
ব্যাখ্যা: হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী এবং জ্ঞানপিপাসু। তিনি মহানবি (স.) থেকে বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষত ফিকহ ও তাফসিরে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
২১. প্রশ্ন: ইফকের ঘটনা কীসের সাথে সম্পর্কিত?
* ক) হযরত আয়েশা (রা.)-এর দানশীলতা
* খ) হযরত আয়েশা (রা.)-এর উপর আরোপিত মিথ্যা অপবাদ
* গ) হযরত আয়েশা (রা.)-এর একটি যুদ্ধযাত্রা
* ঘ) হযরত আয়েশা (রা.)-এর অসুস্থতা
সঠিক উত্তর: খ) হযরত আয়েশা (রা.)-এর উপর আরোপিত মিথ্যা অপবাদ
ব্যাখ্যা: ‘ইফক’ অর্থ চরম মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বা অপবাদ। মুনাফিকরা হযরত আয়েশা (রা.)-এর চারিত্রিক পবিত্রতা নিয়ে জঘন্য মিথ্যা অপবাদ রটিয়েছিল, যা ইতিহাসে ইফকের ঘটনা নামে পরিচিত। পরবর্তীতে আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের আয়াত নাজিল করে তাঁর নির্দোষিতা প্রমাণ করেন।
২২. প্রশ্ন: হযরত আয়েশা (রা.)-এর উপাধি কী ছিল?
* ক) সিদ্দিকা ও হুমায়রা
* খ) ফারুক
* গ) যুননুরাইন
* ঘ) আসাদুল্লাহ
সঠিক উত্তর: ক) সিদ্দিকা ও হুমায়রা
ব্যাখ্যা: হযরত আয়েশা (রা.)-এর অন্যতম উপাধি ছিল ‘সিদ্দিকা’ (সত্যবাদিনী)। এছাড়া মহানবি (স.) তাঁকে আদর করে ‘হুমায়রা’ (ছোট্ট লাল সুন্দরী) বলেও ডাকতেন।
হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.)
২৩. প্রশ্ন: হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.) ইসলামের ইতিহাসে কী হিসেবে পরিচিত?
* ক) ইসলামের প্রথম খলিফা
* খ) উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা
* গ) ইসলামের পঞ্চম ন্যায়পরায়ণ খলিফা (খুলাফায়ে রাশিদিনের অন্তর্ভুক্ত গণ্য)
* ঘ) আব্বাসীয় বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক
সঠিক উত্তর: গ) ইসলামের পঞ্চম ন্যায়পরায়ণ খলিফা (খুলাফায়ে রাশিদিনের অন্তর্ভুক্ত গণ্য)
ব্যাখ্যা: হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.) ছিলেন উমাইয়া খলিফা। তবে তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, আল্লাহভীতি, সরল জীবনযাপন এবং খিলাফতের সংস্কারমূলক কার্যক্রমের জন্য তাঁকে খুলাফায়ে রাশিদিনের (প্রথম চার খলিফা) সাথে তুলনা করা হয় এবং ইসলামের পঞ্চম ন্যায়পরায়ণ খলিফা হিসেবে গণ্য করা হয়।
২৪. প্রশ্ন: হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.)-এর শাসনামলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
* ক) বিলাসিতা ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন
* খ) সাম্রাজ্য বিস্তার ও যুদ্ধবিগ্রহ
* গ) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জনগণের অভাব দূরীকরণ ও ইসলামি আদর্শের পুনরুজ্জীবন
* ঘ) কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন
সঠিক উত্তর: গ) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জনগণের অভাব দূরীকরণ ও ইসলামি আদর্শের পুনরুজ্জীবন
ব্যাখ্যা: হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.) তাঁর সংক্ষিপ্ত (প্রায় আড়াই বছর) শাসনামলে খিলাফতে রাশিদার আদলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ, জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং ইসলামি আদর্শের পুনরুজ্জীবনে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর সময়ে যাকাত গ্রহণ করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যেত না।
২৫. প্রশ্ন: খুতবায় পূর্ববর্তী খলিফাদের প্রতি অভিসম্পাত করার প্রথা কে রহিত করেন?
* ক) হযরত মুয়াবিয়া (রা.)
* খ) আব্দুল মালিক ইবনু মারওয়ান
* গ) ওয়ালিদ ইবনু আব্দুল মালিক
* ঘ) হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.)
সঠিক উত্তর: ঘ) হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.)
ব্যাখ্যা: উমাইয়া শাসনামলে জুমার খুতবায় হযরত আলি (রা.) ও তাঁর বংশধরদের প্রতি অভিসম্পাত করার একটি নিন্দনীয় প্রথা চালু ছিল। হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই অন্যায় প্রথা রহিত করেন এবং এর পরিবর্তে কুরআনের আয়াত (সূরা নাহল, আয়াত: ৯০) পাঠ করার নির্দেশ দেন।
২৬. প্রশ্ন: হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.)-এর মায়ের দিক থেকে কার সাথে বংশ সম্পর্ক ছিল?
* ক) হযরত আবু বকর (রা.)
* খ) হযরত উমর ফারুক (রা.)
* গ) হযরত উসমান (রা.)
* ঘ) হযরত আলি (রা.)
সঠিক উত্তর: খ) হযরত উমর ফারুক (রা.)
ব্যাখ্যা: হযরত উমর ইবনু আব্দুল আজিজ (র.)-এর মাতা ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর পৌত্রী (পুত্রের কন্যা) উম্মু আসিম লায়লা বিনত আসিম। এই কারণে তাঁর চরিত্রে হযরত উমর (রা.)-এর ন্যায়পরায়ণতার ছাপ দেখা যায়।
হযরত রাবেয়া বসরি (র.)
২৭. প্রশ্ন: হযরত রাবেয়া বসরি (র.) কীসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন?
* ক) একজন শাসক হিসেবে
* খ) একজন কবি হিসেবে
* গ) একজন নারী সাহাবি হিসেবে
* ঘ) একজন উচ্চস্তরের সুফি সাধিকা ও আল্লাহর প্রেমিকা হিসেবে
সঠিক উত্তর: ঘ) একজন উচ্চস্তরের সুফি সাধিকা ও আল্লাহর প্রেমিকা হিসেবে
ব্যাখ্যা: হযরত রাবেয়া বসরি (র.) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের একজন বিখ্যাত নারী সুফি সাধিকা। তিনি আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা (ইশকে ইলাহি), দুনিয়াবিমুখতা, ইবাদতে একাগ্রতা এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ মার্গের জন্য প্রসিদ্ধ।
২৮. প্রশ্ন: হযরত রাবেয়া বসরি (র.) কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
* ক) মক্কায়
* খ) মদিনায়
* গ) বসরায় (ইরাক)
* ঘ) দামেস্কে (সিরিয়া)
সঠিক উত্তর: গ) বসরায় (ইরাক)
ব্যাখ্যা: হযরত রাবেয়া বসরি (র.) ইরাকের বসরা নগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই তাঁকে রাবেয়া বসরি বলা হয়।
২৯. প্রশ্ন: রাবেয়া বসরির (র.) ইবাদতের মূল প্রেরণা কী ছিল?
* ক) জান্নাতের আকাঙ্ক্ষা
* খ) জাহান্নামের ভয়
* গ) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভ
* ঘ) মানুষের প্রশংসা অর্জন
সঠিক উত্তর: গ) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভ
ব্যাখ্যা: হযরত রাবেয়া বসরি (র.) জান্নাতের লোভে বা জাহান্নামের ভয়ে ইবাদত করতেন না, বরং তাঁর ইবাদতের মূল প্রেরণা ছিল শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার প্রতি নিখাদ ভালোবাসা ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
৩০. প্রশ্ন: হযরত রাবেয়া বসরির (র.) জীবনের অন্যতম শিক্ষা কী?
* ক) জাগতিক সম্পদ অর্জনের গুরুত্ব
* খ) রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের প্রচেষ্টা
* গ) আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা ও আত্মনিবেদন
* ঘ) সামাজিক প্রতিপত্তি অর্জনের চেষ্টা
সঠিক উত্তর: গ) আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা ও আত্মনিবেদন
ব্যাখ্যা: হযরত রাবেয়া বসরির (র.) জীবন থেকে আমরা আল্লাহর প্রতি গভীর ও নিঃশর্ত ভালোবাসা, দুনিয়ার প্রতি নির্মোহতা, ইবাদতে একনিষ্ঠতা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য আত্মনিবেদনের শিক্ষা লাভ করি।