আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : অনুচ্ছেদ
দিনটি ছিল বাঙ্গাব্দ ১৩৫৮ সানের ৮ই ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর সেদিন নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল পাকিস্তানী পুলিশ বাহিনী। সেদিন আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। শহিদ হয়েছিলেন – সালাম, রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার সহ নাম নাজানা অনেকে। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর বর্তমান বাংলাদেশ ছিলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। এ অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠি বাংলার মানুষের উপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে ঘোষনা করেন। এই ঘোষনা বাংলার আপামর জনতা ও ছাত্র সমাজ কেউই স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। তাই ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। যার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল করার মধ্য দিয়ে।
সেদিনের শহীদের রক্ত বৃথা যায়নি। অব্যহত আন্দলনের ফলে ততকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৫৪ সালের ৭ মে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বধ্য হয়। এরপর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ১৮৮ টি দেশের সম্মতিতে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষনা করে। ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র একুশে ফেব্রুয়ারিকে অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে।
উপরে যে অনুচ্ছেদটি এতোক্ষন পড়লে একই অনুচ্ছেদ থেকে আরও কয়েকটি অনুচ্ছেদ রচনা করা যায়। যেমন- একুশে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ, শহিদ দিবস অনুচ্ছেদ। এছাড়াও অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি প্রতিবেদন রচনা পড়তে পার। নিচে একই অনুচ্ছেদের আরও একটি সংস্করন আলোচনা করা হলো-
একাডেমিক প্রশ্ন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ রচনা class 10
বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি একটি স্মরণীয় অধ্যায়। একদিকে যেমন অর্জনের দিন, অন্যদিকে হারানাের বেদনার দিন। ব্রিটিশ দুঃশাসনের অবসানের মধ্যদিয়ে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হয়। রাজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত পশ্চিম পাকিস্তানিরা প্রথমেই আমাদের ভাষাকে নিয়ে চক্রান্ত শুরু করে।
পাকিস্তানের গভর্নর মুহাম্মদ আলী জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বীর বাঙালি। তারা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তােলে। মিছিল মিটিং-এ চারিদিক উত্তাল করে তােলে। ভঙ্গ করে সরকারের দেয়া ১৪৪ ধারা। পাকিস্তানি শাসক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বৃষ্টির মতাে গুলিবর্ষণ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সেই গুলিতে রাজপথে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, শফিকুসহ অজ্ঞাতনামা অনেকে।
কিন্তু দমননীতি দিয়ে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। জীবনের বিনিময়ে বাঙালি ভাষাকে রক্ষা করেছে। অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তার পর থেকে প্রতি বছর এ দিনটির স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ‘ হিসেবে পালিত হচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেন-“ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি ”-গানটি। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এই বিরল ঘটনাকে সম্মান দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়।