3 min read

আমার মনে হয়, যে দেশের নরনারীর মধ্যে পরস্পরের হৃদয় জয় করিয়া বিবাহ করিবার রীতি নাই

আমার মনে হয়, যে দেশের নরনারীর মধ্যে পরস্পরের হৃদয় জয় করিয়া বিবাহ করিবার রীতি নাই, বরঞ্ছ তাহা নিন্দার সামগ্রী, যে দেশে নরনারী আশা করিবার সৌভাগ্য, আকাঙ্ক্ষা করিবার ভয়ঙ্কর আনন্দ হইতে চিরদিনের জন্য বঞ্ছিত, যাহাদের জয়ের গর্ব, পরাজয়ের ব্যথা কোনটাই জীবনে একটিবারও বহন করিতে হয় না, যাহাদের ভুল করিবার দুঃখ, আর ভুল না করিবার আত্মপ্রসাদ, কিছুরই বালাই নাই, যাহাদের প্রাচীন এবং বহুদর্শী সমাজ সর্ব প্রকারের হাঙ্গামা হইতে অত্যন্ত সাবধানে দেশের লোককে তফাৎ করিয়া, আজীবন কেবল ভালোটি হইয়া থাকিবারই ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন, তাই বিবাহ ব্যাপারটা যাহাদের শুধু নিছক ইংরেজি তা সে যতই বৈদিক মন্ত্র দিয়া ইংরেজি পাকা করা হোক, সে দেশের লোকের সাধ্যই নাই মৃত্যুঞ্চয়ের অন্নপাপের কারণ বোঝে।

বিলাসীকে যাঁহারা পরিহাস করিয়াছিলেন, তাঁহারা সাধু গৃহস্থ এবং সাধ্বী গৃহিণী। অক্ষয় সতীলোক তাঁহারা সবাই পাইবেন, তাও আমি জানি, কিন্তু সেই সাপুড়ের মেয়েটি যখন একটি পীড়িত শয্যাগত লোককে তিল তিল করিয়া জয় করিতেছিল, তাহার তখনকার সেই গৌরবের কণামাত্র হয়তো আজিও ইহাদের কেহ চোখে দেখেন নাই। মৃত্যুঞ্জয় হয়তো নিতান্তই একটা তুচ্ছ মানুষ ছিল, কিন্তু তাহার হৃদয় জয় করিয়া দখল করার আনন্দটাও তুচ্ছ নহে, সেই সম্পদও অকিঞ্চিৎকর নহে।

সারাংশ:

হৃদয় জয় করে কাউকে আপন করে পাওয়ার আনন্দ কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বিরল। মৃত্যুঞ্জয়ের হৃদয় জয়ের যে অসামান্য গৌরব বিলাসী অর্জন করেছিল তা আধুনিক যুগের মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। বৈদিক মন্ত্র দিয়ে হৃদয় জয়ের বিরল অনুভূতি বোঝার সাধ্যও তাই কারো নেই।

0
0
0
0
0

Download Post

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *