অষ্টম শ্রেনী হিন্দুধর্ম শিক্ষা
প্রথম অধ্যায়: ঈশ্বরের স্বরূপ
১. এ বিশ্বে যা কিছু ঘটছে তার প্রত্যেকটির পেছনের প্রথম কারণকে কী বলা হয়?
ক) প্রকৃতি
খ) জীবাত্মা
গ) ঈশ্বর
ঘ) মায়া
সঠিক উত্তর: গ) ঈশ্বর
ব্যাখ্যা: মহাবিশ্ব সৃষ্টির কারণ অনুসন্ধান করলে অনেক কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে, তবে সৃষ্টির প্রথম কারণকে ঈশ্বর বলা হয়।
২. ঈশ্বর যখন নিরাকার, তখন তিনি কী নামে পরিচিত?
ক) ভগবান
খ) আত্মা
গ) ব্রহ্ম
ঘ) পরমেশ্বর
সঠিক উত্তর: গ) ব্রহ্ম
ব্যাখ্যা: ঈশ্বর যখন নিরাকার, তখন তিনি ব্রহ্ম।
৩. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ অনুসারে, কে সকল জীবের মধ্যে প্রচ্ছন্নরূপে অবস্থান করছেন?
ক) দেব-দেবী
খ) এক ঈশ্বর
গ) ঋষিগণ
ঘ) গুরু
সঠিক উত্তর: খ) এক ঈশ্বর
ব্যাখ্যা: শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে, “একো দেবঃ সর্বভূতেষু গূঢ়ঃ” অর্থাৎ এক ঈশ্বর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং সকল জীবের মধ্যে প্রচ্ছন্নরূপে অবস্থান করছেন।
৪. হিন্দুধর্মানুসারে, কিসের ধ্বংস নেই?
ক) দেহের
খ) জীবাত্মার
গ) পৃথিবীর
ঘ) গ্রহ-নক্ষত্রের
সঠিক উত্তর: খ) জীবাত্মার
ব্যাখ্যা: হিন্দুধর্মানুসারে জীবের দেহের ধ্বংস আছে, কিন্তু জীবাত্মার ধ্বংস নেই।
৫. উপনিষদের মতে, প্রাণী ও অপ্রাণী যাঁর কাছ থেকে জন্মলাভ করে এবং যাঁর কাছে ফিরে যায়, তিনি কে?
ক) ভগবান
খ) পরমাত্মা
গ) ব্রহ্ম বা ঈশ্বর
ঘ) আত্মা
সঠিক উত্তর: গ) ব্রহ্ম বা ঈশ্বর
ব্যাখ্যা: উপনিষদে বলা হয়েছে, ‘প্রাণী ও অপ্রাণী যে-কোনো বিষয় বা পদার্থ যে-স্থান থেকে জন্মলাভ করে, মৃত্যু বা ধ্বংসের মাধ্যমে আবার যাঁর কাছে ফিরে যায়, তিনিই ব্রহ্ম বা ঈশ্বর।’
৬. নিরাকার ব্রহ্মকে বোঝাবার জন্য ঋষিরা কোন প্রতীকী শব্দটি ব্যবহার করেছেন?
ক) স্বস্তি
খ) শ্রী
গ) ওঁ
ঘ) ক্লীং
সঠিক উত্তর: গ) ওঁ
ব্যাখ্যা: নিরাকার ব্রহ্মকে বোঝাবার জন্য ঋষিরা ‘ওঁ’-এ প্রতীকী শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
৭. ‘বৃহত্ত্বাৎ ব্রহ্ম’ কথাটির অর্থ কী?
ক) ব্রহ্ম ক্ষুদ্রতম
খ) বৃহৎ বলেই তাঁর নাম ব্রহ্ম
গ) ব্রহ্ম সর্বত্র বিরাজমান
ঘ) ব্রহ্ম আনন্দস্বরূপ
সঠিক উত্তর: খ) বৃহৎ বলেই তাঁর নাম ব্রহ্ম
ব্যাখ্যা: ব্রহ্ম শব্দের অর্থ বৃহৎ। বৃহত্ত্বাৎ ব্রহ্ম, বা বৃহৎ বলেই তাঁর নাম ব্রহ্ম।
৮. ব্রহ্ম যখন জীবের ওপর প্রভুত্ব করেন এবং জীবকুলে সকল কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন তখন তাঁকে কী বলা হয়?
ক) পরমাত্মা
খ) ভগবান
গ) ঈশ্বর
ঘ) জীবাত্মা
সঠিক উত্তর: গ) ঈশ্বর
ব্যাখ্যা: ‘ঈশ্বর’ শব্দের অর্থ প্রভু। ব্রহ্ম যখন জীবের ওপর প্রভুত্ব করেন এবং জীবকুলে সকল কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন তখন তাঁকে ঈশ্বর বলা হয়।
৯. ঈশ্বর যখন দুষ্টের দমন এবং ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীতে নেমে আসেন, তখন তাঁকে কী বলে?
ক) দেবতা
খ) অবতার
গ) ঋষি
ঘ) গুরু
সঠিক উত্তর: খ) অবতার
ব্যাখ্যা: তিনি যখন দুষ্টের দমন করেন এবং ন্যায়-নীতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীতে নেমে আসেন, তখন তাঁকে অবতার বলে।
১০. ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি যখন আকার ধারণ করে, তখন তাঁকে কী বলে?
ক) অবতার
খ) পরমাত্মা
গ) দেবতা বা দেব-দেবী
ঘ) ভগবান
সঠিক উত্তর: গ) দেবতা বা দেব-দেবী
ব্যাখ্যা: ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি যখন আকার ধারণ করে, তখন তাঁকে দেবতা বা দেব-দেবী বলে।
১১. ‘ভগ’ শব্দটির অর্থ কী?
ক) শক্তি
খ) জ্ঞান
গ) ঐশ্বর্য বা গুণ
ঘ) সৃষ্টি
সঠিক উত্তর: গ) ঐশ্বর্য বা গুণ
ব্যাখ্যা: ‘ভগ’ শব্দটির অর্থ ঐশ্বর্য বা গুণ।
১২. ঈশ্বরের কয়টি গুণ বা ঐশ্বর্য রয়েছে?
ক) তিনটি
খ) পাঁচটি
গ) ছয়টি
ঘ) সাতটি
সঠিক উত্তর: গ) ছয়টি
ব্যাখ্যা: ঈশ্বরের ছয়টি গুণ-ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য। এই ছয়টি ভগ বা ঐশ্বর্য আছে বলে ঈশ্বরকে ভগবান বলা হয়।
১৩. আত্মা বা পরমাত্মা যখন জীবের মধ্যে অবস্থান করেন তখন তাঁকে কী বলা হয়?
ক) ঈশ্বর
খ) ভগবান
গ) জীবাত্মা
ঘ) ব্রহ্ম
সঠিক উত্তর: গ) জীবাত্মা
ব্যাখ্যা: আত্মা বা পরমাত্মা যখন জীবের মধ্যে অবস্থান করেন তখন তাঁকে বলা হয় জীবাত্মা।
১৪. কারা সকল বিষয়-বাসনা পরিত্যাগ করে কেবল সর্বব্যাপী ও নিরাকার ব্রহ্মকে উপাসনা করেন?
ক) ভক্ত
খ) যোগী
গ) জ্ঞানী
ঘ) ঋষি
সঠিক উত্তর: গ) জ্ঞানী
ব্যাখ্যা: যাঁরা সকল বিষয়-বাসনা পরিত্যাগ করে কেবল সর্বব্যাপী ও নিরাকার ব্রহ্মকে উপাসনা করেন এবং ব্রহ্মেই সন্তুষ্ট থাকেন, তাঁদের জ্ঞানী বলা হয়।
১৫. জ্ঞান কয় প্রকার?
ক) এক প্রকার
খ) দুই প্রকার
গ) তিন প্রকার
ঘ) চার প্রকার
সঠিক উত্তর: খ) দুই প্রকার
ব্যাখ্যা: জ্ঞান দুই প্রকার-বিদ্যা ও অবিদ্যা।
১৬. কিসের দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়?
ক) অবিদ্যা
খ) ভক্তি
গ) কর্ম
ঘ) বিদ্যা
সঠিক উত্তর: ঘ) বিদ্যা
ব্যাখ্যা: বিদ্যার দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়।
১৭. ধর্মশাস্ত্রে জ্ঞানী বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
ক) জাগতিক বিষয়ে জ্ঞানী
খ) আত্মা বা ব্রহ্ম সম্বন্ধে জ্ঞানী
গ) শাস্ত্রে পণ্ডিত
ঘ) কর্মে নিপুণ
সঠিক উত্তর: খ) আত্মা বা ব্রহ্ম সম্বন্ধে জ্ঞানী
ব্যাখ্যা: ধর্মশাস্ত্রে জ্ঞানী বলতে আত্মা বা ব্রহ্ম সম্বন্ধে জ্ঞানী ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে।
১৮. যোগীদের মুখ্য উদ্দেশ্য কী?
ক) জাগতিক সুখ
খ) ঈশ্বরলাভ
গ) শক্তি অর্জন
ঘ) জ্ঞানার্জন
সঠিক উত্তর: খ) ঈশ্বরলাভ
ব্যাখ্যা: যোগীদের মুখ্য উদ্দেশ্য ঈশ্বরলাভ।
১৯. ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’- এই অমর বাণীটি কার?
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) শ্রীরামকৃষ্ণ
গ) স্বামী বিবেকানন্দ
ঘ) শ্রীচৈতন্য
সঠিক উত্তর: গ) স্বামী বিবেকানন্দ
ব্যাখ্যা: মহাযোগী ও মহাজ্ঞানী স্বামী বিবেকানন্দ এ মহাবিশ্বের সকল কিছুকেই বহুরূপে ঈশ্বররের প্রকাশ বলে অভিহিত করেছেন। ঈশ্বর সম্পর্কে তাঁর অমর বাণী-‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’
২০. ভক্তের নিকট ঈশ্বর কী রূপে প্রতিভাত হন?
ক) ব্রহ্ম
খ) পরমাত্মা
গ) ভগবান
ঘ) জীবাত্মা
সঠিক উত্তর: গ) ভগবান
ব্যাখ্যা: ভক্তের নিকট ঈশ্বর ভগবান। তিনি রসময়, আনন্দময় ও গুণময়।
২১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের কবিতা অনুসারে, সীমার মাঝে কে আপন সুর বাজান?
ক) জীবাত্মা
খ) অসীম (ঈশ্বর)
গ) প্রকৃতি
ঘ) মায়া
সঠিক উত্তর: খ) অসীম (ঈশ্বর)
ব্যাখ্যা: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একটি কবিতায় প্রকাশ করেছেন: “সীমার মাঝে, অসীম, তুমি বাজাও আপন সুর।”
২২. শুক্লযজুর্বেদের প্রার্থনামূলক মন্ত্রে কিসের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে?
ক) ধনসম্পদ
খ) দীর্ঘ জীবন
গ) সকল প্রাণী যেন বন্ধুর চোখে দেখে
ঘ) শত্রুদের বিনাশ
সঠিক উত্তর: গ) সকল প্রাণী যেন বন্ধুর চোখে দেখে
ব্যাখ্যা: শুক্লযজুর্বেদের এ-মন্ত্রে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে- ঈশ্বর যেন আমাদের জ্ঞানে ও শক্তিতে এমন দৃঢ় করেন যাতে সকল প্রাণী আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে এবং আমরাও যেন তাদের বন্ধুর চোখে দেখি।
২৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রার্থনামূলক বাংলা কবিতায় কিসের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে?
ক) জাগতিক উন্নতি
খ) ব্যক্তিগত সুখ
গ) অন্তরকে নির্মল, উজ্জ্বল ও সুন্দর করার জন্য
ঘ) শত্রুদের দমন
সঠিক উত্তর: গ) অন্তরকে নির্মল, উজ্জ্বল ও সুন্দর করার জন্য
ব্যাখ্যা: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কবিতার মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পবিত্র, উদার ও সুন্দর মন এবং সচেতনতা, সক্রিয়তা ও নির্ভীকতা প্রার্থনা করা হয়েছে।
২৪. যজুর্বেদের প্রধান বর্ণনার বিষয় কী?
ক) ঈশ্বরের স্বরূপ
খ) দেব-দেবীর স্তুতি
গ) যজ্ঞ ও যজ্ঞ-প্রণালী
ঘ) আত্মার অমরত্ব
সঠিক উত্তর: গ) যজ্ঞ ও যজ্ঞ-প্রণালী
ব্যাখ্যা: যজুর্বেদের প্রধান বর্ণনার বিষয় যজ্ঞ ও যজ্ঞ-প্রণালী।
২৫. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে কোন বিষয়ে আলোচনা রয়েছে?
ক) সৃষ্টির রহস্য ও ব্রহ্মের স্বরূপ
খ) পূজা-পার্বণের নিয়ম
গ) যোগাসনের পদ্ধতি
ঘ) অবতারদের কাহিনী
সঠিক উত্তর: ক) সৃষ্টির রহস্য ও ব্রহ্মের স্বরূপ
ব্যাখ্যা: এ উপনিষদে আমরা কোথা থেকে জন্মেছি, কীভাবে জীবন ধারণ করছি এবং প্রলয়ের পরে কোথায় থাকব এ-সব বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। এ উপনিষদে ব্রহ্মের স্বরূপও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
২৬. ঈশ্বরের একত্ব সম্পর্কে কোন উপনিষদে বিশেষভাবে বলা হয়েছে?
ক) কঠোপনিষদ
খ) কেনোপনিষদ
গ) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ
ঘ) ছান্দোগ্য উপনিষদ
সঠিক উত্তর: গ) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ
ব্যাখ্যা: শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে ঈশ্বরের একত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে- “একো দেবঃ সর্বভূতেষু গূঢ়ঃ সর্বব্যাপী সর্বভূতান্তরাত্মা।”
২৭. কে সকল কাজের কর্তা এবং সকল জীবের আবাসস্থল?
ক) প্রকৃতি
খ) মানুষ
গ) ঈশ্বর
ঘ) গ্রহ-নক্ষত্র
সঠিক উত্তর: গ) ঈশ্বর
ব্যাখ্যা: শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ অনুসারে, ঈশ্বর সকল কাজের কর্তা এবং সকল জীবের আবাসস্থল।
২৮. ভক্তের ডাকে কে সাড়া দেন ও লীলা করেন?
ক) ব্রহ্ম
খ) পরমাত্মা
গ) ভগবান
ঘ) জীবাত্মা
সঠিক উত্তর: গ) ভগবান
ব্যাখ্যা: ভগবান ভক্তের ডাকে সাড়া দেন ও লীলা করেন।
২৯. যোগীর দৃষ্টিতে ঈশ্বর কী?
ক) ব্রহ্ম
খ) ভগবান
গ) পরমাত্মা
ঘ) পরমেশ্বর
সঠিক উত্তর: গ) পরমাত্মা
ব্যাখ্যা: যোগীদের দৃষ্টিতে ঈশ্বর পরমাত্মা। এই পরমাত্মাই জীবাত্মারূপে জীবের মধ্যে অবস্থান করেন। (বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর অনুযায়ী )
৩০. জীবের মধ্যে আত্মারূপে কে বিরাজ করেন?
ক) মায়া
খ) অসীম পরমাত্মা বা ঈশ্বর
গ) বিভিন্ন দেবতা
ঘ) পূর্বপুরুষগণ
সঠিক উত্তর: খ) অসীম পরমাত্মা বা ঈশ্বর
ব্যাখ্যা: জীবের দেহের সীমার মধ্যে অসীম পরমাত্মা বা ঈশ্বর বিরাজ করেন। তাঁর ক্রিয়াশীলতার কারণেই আমাদের জীবন এত সুন্দর, এত মধুর।