জাতীয় দৈনিকে প্রকাশের জন্য পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদনের খসড়া লেখ।
পুরাকীর্তি সংরক্ষণ : জাতীয় দায়িত্ব
বাঙালি জাতি হীন নয়, দুর্বল নয়। বাঙালির রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস- ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, নানা কীর্তি ও স্থাপনার দৃষ্টিনন্দন স্বাক্ষর। এসব পুরনাে ঐতিহ্য-কীর্তি ছড়িয়ে আছে দেশের নানা স্থানে। এগুলাে আবিষ্কার করা, উদ্ধার করা ও যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা আমাদের সবার জাতীয় দায়িত্ব।
সম্প্রতি নরসিংদী জেলার উয়ারী-বটেশ্বরে খননের পর আবিষ্কৃত পুরাকীর্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রমাণিত হয়েছে এটি আড়াই হাজার বছর আগের প্রাচীন কার্তি। অর্থাৎ বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষ আড়াই হাজার বছর আগেই উন্নত সভ্যতার অধিকারী ছিল। কয়েক কিলােমিটার এলাকা জুড়ে এ সভ্যতার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে, যা আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলাের উদ্ধার ও সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। এর আগে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন দুর্গ-নগরী মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি বিহার ইত্যাদি। মহাস্থানগড়ে পুরাকীর্তির মধ্যে আরও রয়েছে বৈরাগীর ভিটা, খােদার পাথর ভিটা, মানকালীর মন্দির, গােবিন্দ ভিটা, জীয়ৎকু্ন্ড ইত্যাদি।
ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় সােমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বিহার যা বৌন্ধ ও হিন্দু পুরাকীর্তির নিদর্শন। সম্প্রতি বিক্রমপুরে আবিষ্কৃত হয়েছে আর একটি প্রাচীন বিহার, যেখানে অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞানের শিক্ষাজীবন জড়িয়ে আছে। এ ছাড়া বৃহত্তর দিনাজপুরে খননের পর আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন দুর্গ ও মসজিদ।
প্রাচীন পুরাকীর্তির মধ্যে আমাদের দেশে এখনও দাড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দিত সােনা মসজিদ, যাটগম্বুজ মসজিদ, হযরত শাহ জালালের মাজার, কান্তজীর মন্দির, লালবাগের কেল্লা, সােনারগাঁওয়ের প্রাচীন প্রাসাদ, মসজিদ ও সেতু। এ ছাড়াও সারাদেশে ছড়িয়ে আছে অনেক রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি, মসজিদ, মন্দিরসহ নানা রকম স্থাপনা। এগুলাে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও কৃষ্টির মূল্যবান নিদর্শন, যা আমাদের মেধা-মনন-চেতনার পৌরবময় উৎস। তাই এগুলােকে নষ্ট বা ধ্বংস করা একেবারেই উচিত নয়। বরং এসব পুরাকীর্তি যত্নের সঙ্গে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা একান্তভাবেই আমাদের সবার জাতীয় দায়িত্ব।
প্রতিবেদক
আলী ইমাম রাজন