দন্ডিতের সাথে দন্ড-দাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার

দন্ডিতের সাথে দন্ড-দাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার

ভাব-সম্প্রসারণ: অপরাধ প্রবণতা মানুষের জন্মগত প্রবৃত্তি নয়। কাজেই অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার আগে বিচারককে অপরাধীর প্রতি আন্তরিক হওয়া উচিত। যে বিচারক দণ্ড দিতে গিয়ে অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং নিজেকে দণ্ডিত ব্যক্তির খুব কাছের মানুষ ভেবে ব্যথিত হন তার বিচারই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচার।

অপরাধীকে শাস্তি বা দণ্ড প্রদান বিচারের লক্ষ্য এবং বিচারকের কর্ম। এ শাস্তি প্রদান মূলত অপরাধ দমনের জন্য। দণ্ড বা শাস্তি ব্যতীত অপরাধীর অপরাধ প্রবণতা কমাতে পারে না। তবে সে দণ্ড অর্থহীন যদি না অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তার মধ্যে অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবােধ জন্মানাে না যায়। পাপকে ঘৃণা করা উচিত। কিন্তু পাপীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পাপকার্য থেকে তাকে বিরত করবার চেষ্টা করা উচিত।

দণ্ডভয়ে অন্যায়কারী দূরে থাকে ঠিকই কিন্তু তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় না। তাই তার মানসিকতার পরিবর্তনের প্রয়ােজন। তখনই সম্ভব যখন তার অন্যায় কর্মের পশ্চাতে যে কারণ বিদ্যমান, সে কারণ অপসারিত করা যায়। মােহসীনের ঘরে যে চোর ঢুকেছিল, তিনি তাকে শাস্তি দেন নি। বরং চুরি যাতে না করে তার ব্যবস্থা করেছিলেন। তার সহানুভূতি প্রদর্শনের জন্য চোর ঝরঝর করে কেঁদে পুনরায় চুরি না করার শপথ করেছিল।

দরদ ও মমতা দিয়ে যদি অন্যায়কারীর বিবেক জাগানাে যায়; তবে তার পরিবর্তন হয়। সে ভালাে মানুষ হয়ে ওঠে। মানবিক সম্পর্কের মধ্যে অন্যায়কারীকে বিবেচনা করলে সামাজিক অপরাধ কমে আসবে। হ্রাস পাবে অন্যায়কারীদের সংখ্যা। তাই প্রতিশােধ গ্রহণ দিণ্ডদানের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। অপরাধীকে শাস্তি না দিয়ে তার ভিতরে মানবিক মূল্যবোেধ জাগিয়ে দেওয়া সমাজ ও জাতির কর্তব্য।

❤️ 0
👎 0
😢 0
😡 0

Leave a Reply

Scroll to Top