2 min read

ভাবসম্প্রসারণ: দুঃখের মতাে এত বড় পরশ পাথর আর নাই


ভাব-সম্প্রসারণ: দুঃখ ভােগের পরে যে সুখটি আসে, সেটাই আসল, সেখানেই প্রশান্তি। সুখ ও দুঃখে মানবজীবন গঠিত। জীবন ও জগতের এক প্রান্তে রয়েছে অফুরন্ত সুখ, অন্য প্রান্তে অপরিসীম দুঃখ। নিরন্তর সুখ মানবজীবনের কর্মমুখরতা ও সংগ্রামশীলতাকে স্তব্ধ করে দেয়। দুঃখই সংগ্রামী জীবনের সূতিকাগার। দুঃখই শক্তি। দুঃখ আগুনের মত পুড়িয়ে জীবনকে খাটি করে তােলে। জীবন থেকে দুঃখ সরিয়ে সুখ সমৃদ্ধময় জীবন গড়ে তুলতে মানুষ সচেষ্ট হয়, হয়ে ওঠে কর্মতৎপর।

মানবজীবনে শ্রেষ্ঠত্ব আপনাআপনি আসে না, শ্রেষ্ঠত্বকে অর্জন করতে হয়। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন এক ধরনের সাধনার ফল। সে সাধনার সূতিকাগার হচ্ছে দুঃখ। দুঃখ মানবজীবনে পথের কাঁটা বটে, তবে সে কাঁটা দু হাতে সরিয়ে সুন্দর জীবন গড়ার, খাটি জীবন নির্মাণের স্পৃহা আসে দুঃখেরই ভেতর থেকে। দুঃখ পরশ পাথরের মতাে। নিকৃষ্ট ধাতু যেমন পরশ পাথরের পরশে সােনা হয়ে ওঠে, তেমনি দুঃখের স্পর্শে জীবন হয়ে ওঠে খাটি।

দুঃখই মানুষের ভেতরের শক্তি ও সত্তার জাগরণ ঘটায়। দুঃখে পােড় খাওয়া মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে মনুষ্যত্ব। দুঃখ মানুষকে করে তােলে সর্বংসহা। দুঃখের তেজে মানুষের সকল অহংকার গলে গিয়ে সে হয়ে ওঠে নিরহংকারী, ত্যাগী ও শ্রেষ্ঠ মানব। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষগুলাে দুঃখের সমুদ্রে স্নান করেই শুদ্ধ হয়েছে, দুঃখের স্পর্শেই শ্রেষ্ঠ জীবন পেয়েছে। দুঃখ মানবজীবনের এমনই এক বন্ধু, যার সংস্পর্শে সমগ্র জীবনই উজ্জ্বল প্রােজ্জ্বল হয়ে ওঠে। জীবনে দুঃখবােধ মানুষকে খাঁটি করে তােলে।

শ্রেষ্ঠত্ব জীবনে এমনি এমনিই আসে না। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য পরিশ্রম প্রয়ােজন। সেরূপ শ্রেষ্ঠত্ব পেতে পরিশ্রম করে তা অর্জন করতে হয়। আর সে অর্জন পরশ পাথরের সাথেই তুলনীয়। এজন্যই বলা হয়েছে যে, দুঃখের মতাে এত বড় পরশপাথর আর নাই।

0
0
0
0
0

Download Post

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *