Skip to content

নাম মানুষকে বড় করে না – ভাবসম্প্রসারণ

নাম মানুষকে বড় করে না,
মানুষই নামকে বড় করে তােলে।


ভাব-সম্প্রসারণ:মানুষের জীবন কর্মময়। কর্মগুণেই মানুষ জগতে তার নামকে চির স্মরণীয় করে রাখে। মানবসভ্যতার ইতিহাস অনুসরণ করলে দেখা যায়, মানুষ কর্মগুণেই পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়েছে। সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করার মধ্যেই মানুষের সার্থকতা। মহাকালের অনন্ত প্রবাহে মানুষ যে সীমাবদ্ধ জীবন লাভ করে, তাতে জীবন যেন অনন্ত ঘুমের মধ্যে ক্ষণিকের জন্যে চোখ মেলে তাকানাে।

প্রত্যেক মানুষই তার পরিচয় চিহ্নিত করার জন্যে নিজস্ব একটি নাম ধারণ করে। কালের প্রবাহে মানুষের সেই নাম হারিয়ে যায়। কিন্তু কর্মকৃতির জন্যে কারও কারও নাম ভাবীকালের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকে। জগতের বিখ্যাত ব্যক্তির নামের সঙ্গে মিল আছে এমন নামধারী বহু লােক আছে। তারা কর্মগুণে সেই বিখ্যাত মানুষদের নামের উত্তরাধিকার হতে পারেনি। যারা তা পারেন, তাঁরাই টিকে থাকেন ভবিষ্যতের সন্ধানী মানুষের চিন্তার মধ্যে। জীবনের অবসান হলেও সেসব মানুষের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকে, তারা। তাঁদের নামের কারণে স্মরণীয় হন না, স্মরণীয়-বরণীয় মহিমা লাভ করেন তাঁদের কীর্তিময় কর্মের জন্য।

মহৎ সাধনা ও অসামান্য অবদানের জন্য মানুষের নাম মানুষ মনে রাখে। কোনাে কীর্তি না থাকলে কারও নাম কেউ মনে রাখে না। একজন মানুষের যতই বিত্ত-বৈভব, প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকুক এবং নাম যতই জৌলুসপূর্ণ হােক, কর্মসাধনায় নিবেদিত প্রাণ না হলে সেই নাম কালের স্রোতে হারিয়ে যায়। জগতের। অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা পরিবার, সমাজ, দেশ, কাল ছাপিয়ে নিজেরাই এক একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছেন। যেমন- রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠাকুর পরিবারে জন্মেছিলেন। পরিবারে সবার নাম ছাপিয়ে কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর নাম জগতে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। অত্যন্ত সাধারণ ও দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও অসামান্য অবদানের জন্য জগতে নন্দিত হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই তাদের সৃষ্টি দিয়ে মানুষের মনে আসন পেতেছেন। মানুষ তাদেরকে অন্তরে স্থান দিয়ে ধন্য হয়েছে। মানুষ ক্ষণস্থায়ী জীবনের অধিকারী। তাই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে মহিমান্বিত করতে মানুষ নানাভাবে চেষ্টা ও যত্ন করে।

জগতে মহৎ ও কল্যাণকর কর্মসাধনার মাধ্যমে নিজেকে নতুন প্রজন্মের কাছে রেখে যেতে চায়। কল্যাণবােধে ও শান্তিময় জগৎ নির্মাণে মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ভাবীকালের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তাই কর্মবীরের নামের অহংকার না করে মানব কল্যাণে আত্মনিয়ােগ করে। কর্মগুণে বড় হয়ে ওঠাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *