বাংলা দ্বিতীয় পত্রঃ প্রত্যয়
ধাতু
ক্রিয়াপদের মূল অংশকে বলা হয় ধাতু বা ক্রিয়ামূল। ক্রিয়াকে ভাঙ্গলে দুটি অংশ পাওয়া যায়। যথা: ১. ধাতু এবং ২. ক্রিয়া বিভক্তি। যেমন : ‘করে’ একটি ক্রিয়াপদ। এই ক্রিয়ার দুটি অংশ হলো কর কর+এ=করে। এখানে ‘কর’ ধাতু বা ক্রিয়ামুল এবং ‘এ’ হলো ক্রিয়া বিভক্তি।
প্রকৃতি
ক্রিয়াবাচক কিংবা নামবাচক শদ্বের মুলকে প্রকৃতি বলে। এটি শব্দের অবিভাজ্য মৌলিক অংশ। ক্রিয়াবাচক শব্দের মূলকে ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু বলে। এবং নামবাচক শব্দের মূলকে নাম প্রকৃতি বা প্রাতিপাদিক বলে। প্রকৃতি কথাটি বোঝানোর জন্য প্রকৃতির আগে ‘✔’ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এই প্রকৃতি চিহ্নটি ব্যবহার করলে প্রকৃতি শব্দটি লেখার প্রয়োজন হয় না। যথা: ✔চল্=অন্ত, ✔পড়ু+উয়া=পড়ুয়া। উদাহরণ দুটিতে চল্ ও পড়ু দুটি প্রকৃতি।
প্রত্যয়
ধাতু, শব্দ বা অব্যয়ের শেষে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে প্রত্যয় বলে। যেমন : ঢাকা+আই=ঢাকাই, ✔কাঁদ্+অন=কাঁদন। উদাহরণে ‘আই’ ও ‘অন’ দুটি প্রত্যয়। মনে রাখতে হবে শব্দ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তি বাদ দিলে প্রকৃতি বা ধাতু পাওয়া যায়।
প্রত্যয়ের প্রকারভেদ
প্রত্যয়কে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. কৃৎ প্রত্যয়।
২. তদ্ধিত প্রত্যয়।
কৃৎ প্রত্যয়
ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয় তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। অথবা, ধাতু বা ক্রিয়ামূলের পরে সেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়, সেগুলোকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। কৃৎ প্রত্যয়ের অপর নাম ধাতু প্রত্যয়। কৃৎ প্রত্যয়ান্ত শব্দকে বলা হয় কৃদন্ত শব্দ। যেমন: ✔চল্+অন্ত=চলন্ত। ✔ডুব+অন্ত=ডুবন্ত।
বাংলা ভাষায় দুই ধরনের কৃৎ প্রত্যয় ব্যবহার আছে। যথা:
ক. খাঁটি বাংলা কৃৎ প্রত্যয় : বাংলায় অনেক নিজস্ব ধাতু রয়েছে যেগুলো সংস্কৃত নয়। এসব ধাতুর সংঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, সেসব প্রত্যয়কে খাটি বাংলা কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন: ✔কাঁদ+অন=কাঁদন, ✔বাঁচ্+অন=বাঁচন ইত্যাদি।
খ. সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় : ধাতুর সঙ্গে যেসব সংস্কৃত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় সেগুলোকে সংস্কুত কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন: ✔গম্+অন=গমন, ✔গৈ+অক=গায়ক।
তদ্বিত প্রত্যয়
বিভক্তিহীন নাম শব্দ বা নাম প্রকৃতির পরে যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় সেগুলোকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। এর অপর নাম শব্দ প্রত্যয়। তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে যেসব শব্দ গঠিত হয়, সেগুলোকে তদ্বিতান্ত শব্দ বলে। যেমন: নগর+ইক=নাগরিক, বোকা+আমি=বোকামি। বাংলা ভাষায় তিন ধরনের তদ্বিত প্রত্যয়ের ব্যবহার আছে। যথা :
ক . বাংলা তদ্বিত প্রত্যয় : বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত ও বিদেশি প্রত্যয় বাদে বাকি প্রত্যয়গুলোকে বাংলা তদ্বিত প্রত্যয় বলে। যেমন: থাল্+আ=থালা, চোর+আই=চোরাই।
খ. সংস্কৃত তদ্বিত প্রত্যয় : সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাকে সংস্কৃত তদ্বিত প্রত্যয় বলে। যেমন : অণু+ইক=আণবিক, পুষ্প+ইত=পুষ্পিত ইত্যাদি।
গ. বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় : শব্দের পরে যেসব বিদেশি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে সেসব প্রত্যয়কে বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন : দোকান+দার=দোকানদার, চলন+সই=চলনসই।
প্রত্যয়ের স্বরগত পরিবর্তন
প্রকৃতির সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হলে শব্দের মাঝে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের নাম গুন, বৃদ্ধি ও সম্পসারণ।
গুন :
ক. ‘ই’ বা ‘ঈ’ স্থলে ‘এ’ হয়। যেমন : ✔চিন+আ=চেনা। ✔নী+আ=নেওয়া। উদাহরণ দুটিতে প্রথমটিতে ‘ই’ স্থানে প্রত্যয়ান্ত শব্দে ’এ’ হয়েছে। দ্বিতীয়টিতে ‘ঈ’ স্থানে অনুরুপে ‘এ’ হয়েছে।
খ. ‘উ’, ‘ঊ’ স্থানে ‘ও’ হয়। যেমন : ✔ধু+আ=ধোয়া (উ স্থানে প্রত্যয়ান্ত শব্দে ‘ও’ হয়েছে)। অনুরুপ ✔মুড়্+অক=মোড়ক।
গ. ‘ঋ’ স্থানে ‘অর’ হয়। যেমন: ✔কৃ+তা=করত>কর্তা, ✔কৃ+অন=করণ।
বৃদ্ধি :
ক. ’অ’ স্থানে ‘আ’ হয়। যেমন: ✔পচ+অক=পাচক, উদাহরণে পচ্ এর ’অ’ স্থানে ‘আ’ হয়েছে। অনুরুপ : অলস+য=আলস্য।
খ. ‘ই’, ‘ঈ’ স্থানে ‘ঐ’ হয়। যেমন : ✔শিশু+অ=শৈশব। নিশা+অ=নৈশ।
গ. ‘উ’, ’ঊ’ স্থানে ‘ঔ’ হয়। যেমন : যুবন+অ=যৌবন, ভূত+ইক=ভৌতিক।
ঘ. ‘ঋ’ স্থানে ’অর’ হয়। যেমন : ✔ধৃ+অক=ধারক।
সম্প্রসারণ :
ক. ’ব’ স্থানে ’উ’ হয়। যেমন : ✔বচ্+ত=উক্ত।
খ. ‘য’ স্থানে ‘ই’ হয়। যেমন : ✔যজ্ইত=ইষ্টি।
গ. ‘র’ স্থানে ’ঋ’ হয়। যেমন : ✔গ্রহ+ত=গৃহীত।
বিঃদ্রঃ প্রকৃত পদকে চিহ্নিত করতে টিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যদি কোন কারণে টিক চিহ্ন টি বুঝতে সমস্যা হয়েছে। তাহলে আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।