বাংলা ভাষার ব্যাকরণিক শব্দ শ্রেণি
পদ
অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। আর এই শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হয় বিভক্তিযোগে। বিভক্তিযোগে শব্দ যখন কোনো বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে পদ বলে। যেমন: রহিম কলেজে যায়। এই বাক্যে মোট ৩টি শব্দ আছে। আর এই তিনটি শব্দের সাথেই বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদে পরিণত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং পদের সঙজ্ঞায় বলা যায়, বিভক্তিযুক্ত কোন শব্দ বা ধাতু যখন কোন বাক্যে বসে তখন ঐ বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা ধাতুকে পদ বলে।
পদের শ্রেণিবিভাগঃ
পদ প্রধানত দুই প্রকার। যথা:
১. সব্যয়
২. অব্যয়।
এ দুটি আবার বাংলা ব্যাকরণে নামপদ ও ক্রিয়াপদ নামে সমধিক পরিচিত।
সব্যয় বা নামপদকে তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী চার ভাগে ভাগ করা হয়।যথা:
১. বিশেষ্য,
২. সর্বনাম,
৩. বিশেষণ,
৪. ক্রিয়া।
সুতরাং বাংলা ভাষার পদ মোট পাঁচ প্রকার। যথা:
১. বিশেষ্য পদ,
২. বিশেষণ পদ,
৩. সর্বনাম পদ,
৪. অব্যয় পদ,
৫. ক্রিয়াপদ।
বিশষ্য পদ
যে পদ কোন কিছুর নাম নির্দেশ করে তাকে বিশেষ্য পদ বলে। অর্থাৎ বাক্রে ব্যবহৃত যেসব পদ দিয়ে কোন ব্যক্তি, বস্তু, ক্রিয়া, স্থান, কাল, ভাব, জাতি, সমষ্টি, কর্ম বা গুণের নাম প্রকাশ করে তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
বিশেষণ পদ
যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি নির্দেশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন :
কাঁচা আম – বিশেষ্যের বিশেষণ
সর্বশক্তিমান তুমি – সর্বনামের বিশেষণ
আস্তে চল – ক্রিয়ার বিশেষণ
বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ শব্দকে বিশেষিত করে এ অনুযায়ী বিশেষণকে প্রথমত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. নাম-বিশেষণ,
২. ভাব-বিশেষণ।
১. নাম-বিশেষণ : যে বিশেষণ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশোষিত করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে।। যেমন:
ভালো ছাত্রকে সবাই ভালোবাসে- বিশেষ্যের বিশেষণ।
তিনি ভদ্র ও বিনয়ী- সর্বনামের বিশেষণ।
২. ভাব-বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ছাড়া অন্য পদকে বিশেষিত করে তাকে ভাব-বিশেষণ বলে।
সর্বনাম পদ
বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে। যেমন: আমি, তোমরা, নিজ, সব সকল ইত্যাদি। ভাষার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং ভাষার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে প্রকাশের জন্য সর্বনামের ব্যবাহর হয়ে থাকে। যেমন : সাহালেহা ভালো মেয়ে। সে সবাইকে সম্মান করে। আসলে দ্বিতীয় বাক্যে ’সে’ ব্যবহার করে সালেহার পুরনাবৃত্তি রোধ করা হয়েছে এবং বাক্যের প্রকৃতি সুন্দর হয়েছে।
অব্যয় পদ
’অব্যয়’ শব্দের অর্থ ‘যার কোন ব্যয় নেই’। বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলো শব্দ আছে যেগুলোর পুরষ, বচন, লিঙ্গ, বিভক্তি ইত্যাদি ভেদে কোন রকম পরিবর্তন হয় না। এগুলোই অব্যয় পদ। সুতরাং বলা যায়, কোন অবস্থাতেই যে পদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ কিংবা বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটায় অব্যয় পদ।
ক্রিয়াপদ
যে পদ ব্যবহারে কোন কিছু করা, হওয়া বা থাকা বুঝায় তাকে ক্রিয়া পদ বলা হয়। ধাতুর পরে ক্রিয়া বিভক্তি যোগে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়ে থাকে। যথা- করি (কর+ই), যাব (যা+ইব), পড়ছি (পড়+ইতেছি) ইত্যাদি।