Skip to content

বিড়ালঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বিড়াল

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শামসুদদীন আবুল কালামের ‘মৌসুম’ গল্পটি রচিত হয়েছে তৎকালীন জমিদারদের অধীন জনজীবনকে কেন্দ্র করে। সে সময় জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে একদল সমাজরুপান্তর ও স্বাধীনতাকামীদের প্রচেষ্টায় কৃষকরা আন্দোলন শুরু করে। গল্পে দেখা যায়, দীর্ঘ খরার পর বৃষ্টির আগমনে কৃষকরা ভালো ফসল পাওয়ার আনন্দে বিভোর হয়। কৃষকদের মনের এই আনন্দ জমিদারের পছন্দ হয় না। চাল মজুদ করে দাম বাড়িয়ে কৃষকদের বেকায়দায় ফেলে দেয় জমিদার।

ক. ‘লাঙ্গুল’ কী?

খ. ‘একটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার হইতে আলোকে আনিয়াছি, ভাবিয়া কমলাকান্তের বড়ই আনন্দ হইল’ – কেন?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কৃষকদের অবস্থার সাথে ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের সাদৃশ্য আলোচনা করো।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার গুণগত পার্থক্যগুলো তোমার যুক্তিসহ উপস্থাপন করো।

ক. ‘লাঙ্গুল’ কী?

উত্তরঃ ‘লাঙুল’ শব্দের অর্থ- লেজ।

খ. “একটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার হইতে আলোকে আনিয়াছি, ভাবিয়া কমলাকান্তের বড়ই আনন্দ হইল’_ কেন?

উত্তরঃকমলাকান্ত নীতিকথার মাধ্যমে বিড়ালকে চুরি করা থেকে বিরত রাখতে পেরেছে ভেবে আনন্দিত হয়।
‘পতিত আত্মা’ বলতে এখানে নৈতিক অধঃপতনকে বোঝানো হয়েছে। দুধ চুরির দায়ে কমলাকান্ত বিড়ালকে মারতে উদ্যত হলে বিড়াল তার প্রতিবাদ করে। বিড়ালের মতে, পৃথিবীর খাদ্যদ্রব্যে সকলেরই সমান অধিকার রয়েছে। তাই ক্ষুধার্ত হয়ে কেউ চুরি করলে তার জন্য কৃপণ ধনীকেই দায়ী মনে করে সে। বিড়ালের যুক্তির কাছে পরাজিত কমলাকান্ত নীতিবাক্যের আশ্রয় নেয়। আর এর মধ্য দিয়ে বিড়ালের মনোভাব পরিবর্তন করতে পেরেছে ভেবে পরিতৃপ্তি লাভ করে কমলাকান্ত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কৃষকদের অবস্থার সাথে ‘বিড়াল’ রচনার বিড়ালের সাদৃশ্য আলোচনা করো।

উত্তরঃ কারো স্থলিত হবার পেছনে যে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা বহুলাংশে দায়ী তেমনি একটি ধারণার যুক্তিনিষ্ঠ উপস্থাপনা ঘটেছে বিড়াল রচনায়। ‘বিড়াল’ রচনায় বিড়ালের ভাষ্যে দরিদ্রের চুরি করার কারণ হচ্ছে ধনীর কৃপণতা। দরিদ্রকে বঞ্ছিত করে ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে আর গরিবরা বেঁচে থাকার জন্য সামান্য খাবার পর্যন্ত পায় না। এ রচনায় বিড়াল চরিত্রটি এসেছে শোষিত, প্রতিবাদী ও শ্রমজীবী শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে। সে অধিকার আদায়ে সচেষ্ট, যেমনটি উদ্দীপকের শোষিত কৃষকদের মাঝে লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকে শামসুদদীন আবুল কালামের ‘মৌসুম’ গল্পে তৎকালীন জমিদারদের শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্র ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি বর্ণিত হয়েছে এ সকল অত্যাচারের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদের চিত্র। সে সময় অত্যাচারী জমিদারের শোষণের বিরুদ্ধে একদল সমাজরুপান্তর ও স্বাধীনতাকামীদের প্রচেষ্টায় কৃষকরা আন্দোলন শুরু করে । দলিত শ্রেণির ক্ষোভ-মর্মবেদনা-প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। বিড়ালের মতে, পৃথিবীর খাদ্যদ্রব্য সকলেরই অধিকার রয়েছে। তাই সে মনে করে ক্ষুধার্ত হয়ে কেউ চুরি করলে তার জন্য কৃপণ ধনীই দায়ী। অর্থাৎ প্রতিবাদী মানসিকতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের কৃষকদের সাথে বিড়াল চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার গুণগত পার্থক্যগুলো তোমার যুক্তিসহ উপস্থাপন করো।

উত্তরঃ আপাত অপরাধীর অপরাধ প্রবণতার পেছনে যে সমাজ ব্যবস্থার অনস্বীকার্য ভূমিকা রয়েছে তেমনি বক্তব্যের অবতারণা ঘটেছে বিড়াল রচনায়।

“বিড়াল” রচনায় ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, দরিদ্রের বঞ্ছনা, সমাজের অরাজকতায় ধনীর ভূমিকা ইত্যাদি নানা বিষয় বিড়ালের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এখানে বিড়ালের সঙ্গে কমলাকান্তের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে লেখক মুলত সামাজিক নানা অসঙ্গতির বিষয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। কিন্তু উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে এর আংশিক দিক মাত্র।

উদ্দীপকে শামসুদদীন আবুল কালাম তার ‘মৌসুম’ গল্পে তৎকালীন জমিদার শ্রেণির নির্মমতার চিত্র তুলে ধরেছেন। এখানে দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টির আগমনে ভালো ফসল পাওয়ার আশায় কৃষকদের আনন্দ প্রকাশ করতে। কেননা ভালো ফসল হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা দু’বেলা পেটপুরে খেতে পারবে। কিন্তু অত্যাচারী জমিদার গরিবের এ সামান্য চাওয়াকে ভালো চোখে দেখেননি । তিনি কৃষকদের বেকায়দায় ফেলতে চাল মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দেন। এতে সঙ্গত কারণেই গরিবদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। কিন্তু ‘বিড়াল’ রচনায় এই বিষয়টিই পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

বিড়াল রচনায় বিড়ালের ভাষ্যে দরিদ্রের চুরি করার কারন হচ্ছে ধনীর কৃপণতা। সে মনে করে, দরিদ্রকে বঞ্ছিত করে ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে আর গরিবরা বেঁচে থাকার জন্য সামান্য খাবার পর্যন্ত পায় না। লেখক একটা বিড়ালের মাধ্যমে শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা শ্লেষাত্মক ও যুক্তিনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করেছেন। এ দিকটি উদ্দীপকের বন্তব্যের চেয়ে অনেক বেশি ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছে।
সুতরাং বক্তব্যের যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় উদ্দীপকের সাথে ‘বিড়াল’ রচনার যথেষ্ট গুণগত পার্থক্য বিদ্যমান ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *