বিড়ালঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

চন্ডিগড় শহরের উপকণ্ঠে বাড়ি ভাড়া নেয় সুরেশ ও কল্যাণী ব্যানার্জী। তাদের এক সন্তান শান্ত। স্বামী-স্ত্রী চাকুরিজীবী হওয়ায় শান্তকে দেখাশোনার জন্য গ্রাম থেকে আনা হয় আট বছর বয়সী দরিদ্র অনিতাকে। সারাদিনের খাটুনিতে অনিতার শ্রান্ত শরীরে ঘুম চলে আসে সন্ধ্যারাতে। কল্যাণীর ধারণা অনিতার খাবারের পরিমাণ আরও কমালে ওর ঘুম আসবে না। তাই অনিতার খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয় কল্যাণী। কম খেতে খেতে অনিতা শীর্ণকায় হয়ে পড়ে। শান্তর উচ্ছিষ্ট সে চুরি করে খায়। এটা জানতে পেরে কল্যাণী অনিতার উপর নির্যাতন চালায়, তওবা করায় এবং উপদেশ দেয় যে চুরি করে খাওয়া পাপ। ফ্রিজে ভর্তি করা খাবার, শান্ত খাওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়ায় আর অনিতা শান্তর উচ্ছিষ্টের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।


ক. কাকে ইতঃপূর্বে যথোচিত পুরস্কার দেওয়া গিয়েছে বলে কমলাকান্ত মনে করল?

খ. ‘সকল দুশ্চিন্তা পরিত্যাগ করিয়া ধর্মাচরণে মন দাও’- কে, কেন বলেছিল?

গ. উদ্দীপকের অনিতা ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের কোন শ্রেণিকে স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকের ভাবার্থ ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন করো।

ক. কাকে ইতঃপূর্বে যথোচিত পুরস্কার দেওয়া গিয়েছে বলে কমলাকান্ত মনে করল?

উত্তরঃ ডিউক ইতঃপূর্বে যথোচিত পুরস্কার দেওয়া গিয়েছে বলে কমলাকান্ত মনে করল।

খ. ‘সকল দুশ্চিন্তা পরিত্যাগ করিয়া ধর্মাচরণে মন দাও’- কে, কেন বলেছিল?

উত্তরঃ বিড়ালের যুক্তিগ্রাহ্য কথায় পর্যুদস্ত হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কমলাকান্ত প্রশ্নোন্ত উত্তিটি করেছিল।
কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু বিড়াল খেয়ে ফেলায় সে তাকে মারতে উদ্যত হয়। তখন বিড়াল তার চোর হওয়ার কারণ হিসেবে কৃপণ ধনী ব্যক্তিদের ও সাধারণ মানুষের নির্দয়তাকে দায়ী করে। বিড়ালের মুখে এমন যুক্তিগ্রাহ্য কথা শুনে সে পর্যুদস্ত হয়। কিন্তু তা বিড়ালকে বুঝতে না দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কমলাকান্ত উপদেশসূচক প্রশ্নোক্ত উত্তিটি করেছিল ।

গ. উদ্দীপকের অনিতা ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের কোন শ্রেণিকে স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উদীপকের অনিতা ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়াল চরিত্রের নেপথ্যে থাকা বঞ্ছিত, নিষ্পেষিত শ্রেণির কথা স্মারণ করিয়ে দেয়।

‘বিড়াল’ প্রবন্ধে লেখক বশ্চিত ও দলিতের ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও মর্মবেদনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বিড়ালের মুখ দিয়ে শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্রের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের কথা বলেছেন। বিড়ালটি হয়ে উঠেছে সকল উপেক্ষিত অধিকার বঞ্ছিত মানুষের প্রতিনিধি ।

উদ্দীপকে আট বছর বয়সী অনিতাকে ঠিকমতো খেতে দেয় না গৃহকত্রী কল্যাণী। ক্ষুধার জ্বালায় এক পর্যায়ে চুরি করে খেতে শুরু করে অনিতা । তখন কল্যাণী তার উপর নির্যাতন চালায় ও এই বলে উপদেশ দেয় যে- চুরি করা পাপ। কল্যাণীর ছেলে শান্ত খেতেই চায় না। আর অনিতা শান্তর উচ্ছিষ্ট খাওয়ার জন্য লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অন্যদিকে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধটিতে বিড়ালটি ক্ষুধার জ্বালায় কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ খেয়ে ফেলে।

মানুষ মাছের কাটা, পাতের ভাত ফেলে দিলেও বিড়ালকে দেয় না। কিন্তু সমাজের শিরোমণিদের ক্ষেত্রে তারা খেতে না চাইলেও অপরিমিত খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়। বিড়ালের এ অভিযোগের মধ্য দিয়ে সকল দরিদ্র, ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতি সমাজের উঁচু তলায় থাকা মানুষের আচরণের নগ্ন দিক ফুটে ওঠে। উদ্দীপকের অনিতা ও ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়াল দুজনই শোষিত শ্রেণির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের ভাবার্থ ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন করো।

উত্তরঃ উদ্দীপকের মধ্যে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মূলভাবটিই ফুটে উঠেছে। ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বঞ্ছিত শ্রেণির মর্মবেদনা প্রকাশ পেয়েছে। একই সঙ্গে এখানে ফুটে উঠেছে ধনী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের নির্দয়তার দিকটিও।

উদ্দীপকের অনিতা একজন গৃহকর্মী। সারাদিন প্রচণ্ড খাটুনির পরও গৃহকর্ত্রী তাকে ঠিকমতো খেতে দেয় না। ফলে একসময় সে বাধ্য হয়ে চুরি করে খেতে শুরু করে। এদিকে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়ালটিও ক্ষুধার জ্বালায় কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলেছিল।

‘বিড়াল’ প্রবন্ধে একটি বিড়ালের কণ্ঠে সকল বঞ্ছিত, নিষ্পেষিত ও দলিতের ক্ষোভ, প্রতিবাদ ও মর্মবেদনা ফুটে উঠেছে। বিড়ালটির অভিযোগ এই যে, মানুষের নির্দয়তাই তাকে চুরি করতে বাধ্য করেছে। তাদের মতো ক্ষুধার্ত, বঞ্ছিতরা খাবারের অভাবে কষ্ট পায় অথচ ধনী ব্যক্তিদের জন্য খাবারের আয়োজন করতেই ব্যস্ত সবাই। বিড়ালের মতে, চোরের দণ্ড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃপণ ধনী ও নির্দয় মানুষেরও দণ্ড হওয়া দরকার । উদ্দীপকের চিত্রও ‘বিড়াল’ প্রবন্ধটির অনুরূপ। অনিতা ক্ষুধার জ্বালায় শীর্ণকায় হয়ে পড়ে আর কল্যাণীর ছেলে শান্ত খাওয়া থেকে পালিয়ে বেড়ায়। খাওয়ার অভাবে যে ছটফট করে সে খেতে পায় না, আর যে ভরপেটে থাকে তার জন্যই সকল খাদ্যের আয়োজন। ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে ফুটে ওঠা বঞ্ছিতের হাহাকার উদ্দীপকেও সমানভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

Views: 67 Views
❤️ 0
👎 0
😢 0
😡 0

Leave a Reply

Scroll to Top