বিড়ালঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ পর্যন্ত এক কৃষিজীবী পরিবারেই বিয়ে হয় ছবিরানির। স্বামী ধনপতির একটি উন্নত জাতের গাভি আছে; গাভির একটি ছোট্ট বাছুর আছে। সেই বাছুরকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্ছিত করে দুইবেলা গাভির সবটুকু দুধ দোহন করে নেয় ধনপতি। বাছুরকে জোরপূর্বক আটকে রেখে স্বামীকে সহায়তা করে ছবিরানি। গাভি যেন সামান্য দুধও বাছুরের জন্য রাখতে না পারে, সেদিকে কড়া নজর তাদের। কদিন আগে ছবিরানির কোলজুড়ে আসে নবজাত ফুটফুটে এক শিশু সন্তান। এই শিশু যখন ক্ষুধায় কান্না করে, ছবিরানি তখন পরিবারের সব কাজ ফেলে পরম মমতায় সন্তানকে মাতৃদুগ্ধদানে তৃপ্ত করে। একদিন তার শিশু সন্তানকে মাতৃদুগ্ধে পরিতৃপ্ত করতে গিয়ে সে অনুভব করে, মাতৃদুগ্ধ-বঞ্ছিত রেখে কী নির্মম আচরণ করে যাচ্ছে তারা গাভির অসহায় বাছুরের ওপর! তারপর থেকে সে স্বামীকে এই কাজে আর সহায়তা করে না।

ক. ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে দুধ দুহিয়াছে কে?

খ. ‘তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়া, অনেক মার্জার কবি হইয়া পড়ে।- কার, কেন?

গ. উদ্দীপকের ছবিরানি কোন দিক দিয়ে কমলাকান্তের সঙ্গে তুলনীয়?

ঘ. উদ্দীপকে বিবৃত ‘নির্মম আচরণ’ অধিকার হরনেরই নামান্তর- উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ রচনার আলোকে বিগ্লেষণ করো।

ক. ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে দুধ দুহিয়াছে কে?

উত্তরঃ ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে দুধ দুইয়েছে প্রসন্ন।

খ. ‘তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়া, অনেক মার্জার কবি হইয়া পড়ে।- কার, কেন?

উত্তরঃ বিতবানদের আশীর্বাদপুষ্ট মার্জারীর রূপের ছটা দেখে অনেক মার্জারীর মধ্যেই বিশেষ ভাবনার উদ্রেষ্ট হয়।
সমাজে বিত্তহীন শ্রেণি প্রতিনিয়ত বঞ্ছিত হলেও ধনিক শ্রেণি তাদের দিকে দৃষ্টি দেয় না। কদাচিৎ এই শ্রেণির কারো দিকে যদি ধনীদের অনুকম্পার দৃষ্টি পড়ে তবে সে শ্রেণিস্বার্থ ভুলে আপসের মাধ্যমে নাদুসনুদুস হয়ে ওঠে। তখন তার সৌন্দর্য দেখে সগোত্রের অনেকেই ভাবনায় পড়ে যায়, যা কবিরই অনুরূপ।

গ. উদ্দীপকের ছবিরানি কোন দিক দিয়ে কমলাকান্তের সঙ্গে তুলনীয়?

উত্তরঃ একটি বিশেষ উপলব্ধিগত দিক থেকে উদ্দীপকের ছবিরানি ‘বিড়াল’ রচনার কমলাকান্তের প্রতিরূপ।
‘বিড়াল’ রচনায় কমলাকান্ত শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি বিড়ালের সাথে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে গেলেও সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের অবস্থান তাকে ভাবিত করে। বিড়ালের সাথে কথোপকথনে কমলাকান্ত অনুধাবন করে শোষিত শ্রেণিকে তার নিজের অধিকার থেকে বঞ্ছিত করা অনুচিত। তাই শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি বিড়ালের প্রতি কমলাকান্তের সহমর্মী ভাব প্রকাশ পায়।

উদ্দীপকের ছবিরানিও তার শেষ উপলব্ধির মাধ্যমে কমলাকান্তের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে। ছবিরানি প্রথমে অসহায় ক্ষুধার্তকে নিজের অধিকার থেকে বঞ্ছিত রাখলেও শেষ পর্যন্ত তার ভাবনার জগৎ পরিবর্তন হয়। নিজের সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ করতে গিয়ে ছবিরানির মনে পড়ে মাতৃগুদ্ধ বঞ্ছিত বাছুরের কথা। অবশেষে তার মানবিক বোধের জাগরণ ঘটে। বাছুরকে তার ন্যায্য পাওনা মায়ের দুধ থেকে বঞ্ছিত রাখতে তার মনে সায় দেয় না।

এক্ষেত্রে ছবিরানি বরং ‘বিড়াল’ রচনার কমলাকান্তের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সে বাছুরকে তার অধিকার থেকে বঞ্ছিত রাখতে তার স্বামীকে আর সাহায্য করে না। এভাবে ছবিরানি ‘বিড়াল’ রচনার কমলাকান্তের প্রতিভূ হয়ে উঠে।

ঘ. উদ্দীপকে বিবৃত ‘নির্মম আচরণ’ অধিকার হরনেরই নামান্তর- উদ্দীপক ও ‘বিড়াল’ রচনার আলোকে বিগ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ‘ক্ষেত্র বিশেষে কারো প্রতি নির্দয় আচরণ তার অধিকার অস্বীকারকেই স্পষ্ট করে তোলে।‘ বিড়াল রচনায় এমন বন্তব্যই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিড়াল’ রচনায় আমরা দেখতে পাই, নিরীহ প্রাণী বিড়াল খেতে না পেয়ে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কমলাকান্তের দুধ চুরি করে খায়। কমলাকান্ত অনাহারী বিড়ালের ক্ষুধার যন্ত্রণার কথা না ভেবে লাঠি হাতে তার দিকে ধাবিত হন। এটাই ধনীদের শ্রেণিচরিত্র। বিত্তহীন মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণায় তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বস্তুত তাদের শোষণ-বঞ্চনার কারণেই বিড়ালের প্রতীকরুপী নির্যাতিত মানুষের শ্রেণি অবস্থান শোষিতশ্রেণির পর্যায়ে নেমে আসে।
উদ্দীপকের ছবিরানির কাজ নির্মম ও অমানবিক। সে একটি ছোট্ট বাছুরকে খিদে মেটানোর একমাত্র উপাদান মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত করে। নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সে বাছুরের স্বাভাবিক অধিকার হরণ করে। এ আচরণ নিঃসন্দেহে নির্মম। ছবিরানির কোলজুড়ে সন্তান আসার পর তার এই অমানবিকতা সম্পর্কে বোধোদয় হয়। তখন থেকে নিজের শিশুর কথা ভেবে সে আর বাছুরের প্রতি নিমর্মতা দেখাতে পারে না।

পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই কিছু মৌলিক অধিকার নিয়ে জন্মায়। তাদের সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করা চরম নির্মমতার বহিঃপ্রকাশ। উদ্দীপকে সেই নির্মমতার প্রকাশ ঘটেছে ধনপতি ও তার স্ত্রী ছবিরানির আচরণে । তারা গরুর বাছুরকে মায়ের দুধ না খেতে দিয়ে মূলত বাছুরের অধিকারকেই হরণ করেছে। আবার ‘বিড়াল’ রচনায় বিড়ালের মতো শোষিত শ্রেণিকে ধনিক শ্রেণি তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রাখে। তাই বলা যায় উদ্দীপকে বিবৃত ‘নির্মম আচরণ’ তার অধিকার হরণেরই নামান্তর- উক্তিটি যথার্থ।

Views: 64 Views
❤️ 0
👎 0
😢 0
😡 0

Leave a Reply

Scroll to Top