4 min read

ভাষাতত্ত্ব ও বাংলা ভাষা

ভাষা: মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে তাকে দৈনন্দিন জীবনে একে অপরের সাথে প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন ভাবের আদান-প্রদান করতে হয়। আর এ ভাবের আদান-প্রদানের অনুভব থেকেই তাকে কোন না কোন আওয়াজ বা ধ্বনির উচ্চারণ করতে হয়। এভাবে নির্বাক মানুষ মনের অজান্তেই ধ্বনি সৃষ্টি করে। তারপর একদিন সে ধ্বনির প্রতীক আবিষ্কার করে সূচিত করল ভাষার পথ চলা।

ভাষার সংজ্ঞা

মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করে বিভিন্নভাবে। আর এই মনের ভাব প্রকাশের জন্য মানুষ ইশারা-ইঙ্গিত, ধ্বনি, বিভিন্ন সংকেত ও চিত্রাকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তাই ভাষার সংজ্ঞায় আমরা বলতে পারি যে, বাগযন্ত্রের সাহয্যে উচ্চারিত এবং বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত ধ্বনির দ্বারা মানুষ যখন তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করে তখন তাকে ভাষা বলে।

ড. সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায়ের মতে, “মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগ্ যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চরিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোন বিশষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।”

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে-“মানুষ বাগযন্ত্রের সাহায্যে সমাজভুক্ত জনগণের বোধগম্য যে সমস্ত ধ্বনি বা ধ্বনিসমস্টি উচ্চারণ করে সে সমস্ত ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলে।”

ভাষার বৈশিষ্ট্যঃ

ভাষার উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষণীয়-

ক. ভাষা বাগ্ যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি।
খ. ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির অর্থ রয়েছে।
গ. ভাষা একটি বিশেষ সজনমাজের জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ও ব্যবহৃত মাধ্যম।
ঘ. ভাষা ভাব বিনিময়ের মাধ্যম।
ঙ. একমাত্র ধ্বনিগত প্রতীকই ভাষা তা আবার মানুষেরই বাগ্ যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হতে হবে।

বাংলা ভাষার রুপঃ

পৃথিবীর প্রতিটি সমৃদ্ধ ভাষার ন্যায় বাংলা ভাষারও দুটি রুপ রয়েছে। একটি কথ্য ভাষা বা কথা বলার ভাষা যাকে বলা হয় মৌখিক ভাষা, অন্যটি হলো লেখা ভাষা বা লেখার ভাষা। পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষারই এভাবে দুটি রীতি গড়ে উঠেছে। একটি বলার রীতি, অন্যটি লেখার রীতি। বাংলা ভাষায় দুটি রুপ গড়ে গঠেছে। একটি সাহিত্যের জন্য অন্যাটি কথা বলার জন্য। একপর্যায়ে মুখের ভাষা অর্থাৎ কথা রীতিকে সাহিত্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই রীতিটি অতি জনপ্রিয়তা লাভ করে। সাহিত্যে কথা রীতির প্রবর্তক বলা হয় প্রমথ চৌধুরীকে। ভাষার রুপের এই পার্থক্যের কারণে বাংলা গদ্য রীতিতে এখন দুটি রুপ বিদ্যমান।

রুপ দুটি হলো:

১. সাধু রীতি,

২. চলিত রীতি।

সাধু ভাষাঃ

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জম্ন। আর ঊনিশ শতকে বাংলার যে রুপ গড়ে ওঠে তার নাম হলো সাধু ভাষা। রাজা রামহোন রায় সাধু ভাষাকে সংস্কৃত পণ্ডিতের ভাষা বলে প্রথমে অভিহিত করেন। পরে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ গদ্য শিল্পীগণ এই সাধু ভাষাতেই তাঁদের সাহিত্যকীর্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

চলিত ভাষাঃ

শিক্ষিত বাঙালি সমাজে মার্জিত কথা ভাষা হিসেবে প্রচলিত ও সর্বজনমান্য লেখা ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হলো চলিত ভাষা। বালা লৈখিক ভাষার অপেক্ষাকৃত আধুনিক রুপটিকে বলা হয় চলিত ভাষা।

আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষাঃ

বাংলা লেখা ভাষার একটি নির্দিষ্ট রুপ আছে। কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন। তাই বাংলা ভাষাভাষী বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের মুখের যে ভিন্ন ভিন্ন রুপ দেখা যায়, তাকে আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে।

0
0
0
0
0

Download Post

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *