মতলবপুর গ্রামে সুসজ্জিত স্কুল-কলেজঃ বিড়াল

মতলবপুর গ্রামে সুসজ্জিত স্কুল-কলেজ

মতলবপুর গ্রামে সুসজ্জিত স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, সোনাফলা ফসলি জমি সবই আছে কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসা বা স্কুল-কলেজের শিক্ষা গ্রহণের জন্যে যে আর্থিক সামর্থ্যের প্রয়োজন তা গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই নেই। ফসলি জমির ফসল ওঠে কয়েকটি ভূম্বামী পরিবারের গোলায়। তাই অর্ধাহারে, অশিক্ষায় আর চিকিৎসাহীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করে মতলবপুর গ্রামের বেশি ভাগ মানুষ। বাইরে থেকে দেখলে যে গ্রামকে আদর্শ মনে হয়, নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভেসে ওঠে সে গ্রামের বঞ্ছিত গ্রামবাসীর অসহায় মুখচ্ছবি।

ক. চোর অপেক্ষা শতগুণে দোষী কে?
খ. যখন বিচারে পরাস্থ হইবে তখন গম্ভির ভাবে উপদেশ প্রদান করিবে। ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ‘ফসল’ -এর সাথে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের ধনবৃদ্ধির তুলনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের আংশিক বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে।”বাক্যটির তাৎপর্য লেখো।

ক. চোর অপেক্ষা শতগুণে দোষী কে?

উত্তরঃ চোর অপেক্ষা শতগুণে বেশি দোষী কৃপণ ধনী।

খ. যখন বিচারে পরাস্থ হইবে তখন গম্ভির ভাবে উপদেশ প্রদান করিবে। ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ‘ঘখন বিচারে পরাস্ত হইবে তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে’ _এটি কমলাকান্তের একটি আত্মরক্ষামূলক শ্লোত্মক বাণী ।

‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বিড়াল ও কমলাকান্তের মাঝে এক দীর্ঘ কাল্পনিক কথোপকথন হয়। এই কথোপকথনে বিড়াল ও কমলাকান্ত নিজ নিজ মত প্রকাশ করে। এতে বিড়াল ‘সোশিয়ালিস্টিক’, সুবিচারক, সুতার্কিক হওয়ায় কমলাকান্ত বিস্মিত ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে প্রশ্নোক্ত শ্লেষ প্রকাশক মতবাদটির অবতারণা হয়।

গ. উদ্দীপকের ‘ফসল’ -এর সাথে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের ধনবৃদ্ধির তুলনা করো।

উত্তরঃ উদ্দীপকের “ফসল’ শব্দটি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে উল্লেখিত ‘ধনবৃদ্ধি’ বিষয়টির সঙ্গে তুলনীয়।

বিড়াল রচনায় কমলাকান্তের মতে –“সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতঈত সমাজের উন্নতি নাই”। কিন্তু বিড়াল এ প্রসঙ্গে বলেছে, ‘আমি যদি খাইতে না পাইলাম, তবে সমাজের উন্নতি লইয়া কী করিব? বিড়ালের এ মন্তব্যে একটি বিষয় পরিষ্কার, তা হলো- সমাজে ধনসম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্তেও তা যদি অল্প কিছু মানুষের মধ্যেই কুক্ষিগত থাকে, তাহলে সে সম্পদ দিয়ে দরিদ্রের কী লাভ? এজন্যেই বিড়াল দ্বিধাহীনভাবে বলেছে, সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধনবৃদ্ধি। ধনীর ধনবৃদ্ধি না হইলে দরিদ্রের কী ক্ষতি?”

উদ্দীপকে সমাজের ধনবৃদ্ধি সম্পর্কে বিড়ালের মনোভাবের বাস্তব প্রতিফলন লক্ষণীয়। মতলবপুর গ্রামে সম্পদ, ফসলের প্রাচুর্য থাকলেও তা কুক্ষিগত হয়ে আছে কয়েকজন ভুস্বামীর হাতে। তাই অর্ধাহারে, অশিক্ষায় আর চিকিৎসাহীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করে মতলবপুর গ্রামের আশি ভাগ মানুষ। বাইরে থেকে দেখলে যে গ্রামকে আদর্শ বলে মনে হয়, গভীরভাবে দেখলে সেখানে গ্রামবাসীর অসহায়ত্বই কেবল ফুটে ওঠে । উদ্দীপকের ফসল যেমন মুষ্টিমেয় ভূস্বামীর তেমনি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে উল্লিখিত সিংহভাগ ধন হলো ধনীদের। আর এদিক থেকেই উদ্দীপকের ফসল আর ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের ধনিকশ্রেণির ধনবৃদ্ধির দিকটি তুলনীয়।

“উদ্দীপকে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের আংশিক বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে”- মন্তব্যটি যথার্থ।

বিড়াল প্রবন্ধে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, দরিদ্রের বঞ্চনা, সমাজের অরাজকতায় ধনীর দায়িত্ব ইত্যাদি নানা বিষয় বিড়ালের সোশিয়ালিস্টিক মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আর উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে এসব বিষয়ের আংশিক দিক মাত্র।

উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে সমাজের সমস্ত সম্পদ মুষ্টিমেয় মানুষের অধিকারে থাকায় কীভাবে অধিকাংশ মানুষ বিত্তহীন হয়ে পড়ছে ব্যর্থ হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো সংগ্রহ করতে। গ্রামের সিংহভাগ মানুষ হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল ফলালেও তারাই অর্ধাহারে, অশিক্ষায় দিনাতিপাত করে। অবস্থা এমন যে, সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু পর্যন্ত পায় না। এই পরিস্থিতি আলোচ্য ‘বিড়াল’ রচনার একটি দিক মাত্র। ‘বিড়াল’ রচনায় বিড়াল ও কমলাকান্তের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে সমাজ-সত্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচিত হয়েছে।

বিড়াল রচনায় সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সম্পর্কে বিস্তৃত বিষয় বর্ণিত হয়েছে। বিড়ালের মতে, বৈষম্যের কারণে সমাজে যাবতীয় অরাজকতার সৃষ্টি। ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললেও দরিদ্রের দিকে মুখ তুলে তাকায় না। ফলে দরিদ্ররা হতদরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্যে বাধ্য হচ্ছে চুরি করতে। বস্তুত এসব কথা বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর বঞ্ছিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণিত হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে এর একটি দিক। সার্বিক দিক বিবেচনায় তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।

Views: 46 Views
❤️ 0
👎 0
😢 0
😡 0

Leave a Reply

Scroll to Top