মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন
ভাব-সম্প্রসারণ: সফলতা অর্জন করতে হলে জীবনে প্রচুর সাধনার প্রয়ােজন। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন মানবজীবনের প্রধান কাজ। তা সফল করতে হলে অবশ্যই নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। প্রতিটি মানুষই জীবনে অনেক অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আশায় বুক বাঁধে এই ভেবে যে, জীবনে সে অনেক বড় হবে, মানুষের মতাে মানুষ হবে।
কিন্তু জীবনের চলার পথ বড়ই কন্টকাকীর্ণ। তাই কোনাে কাজে সফলতা লাভ সহজ ব্যাপার নয়। বন্ধুর পথকে পায়ে ঠেলে দিয়ে সকল বাধাবিপত্তিকে অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠার সােনালি দুয়ারে পা রাখা সম্ভব। এর জন্য চাই প্রচুর শ্রম, একনিষ্ঠতা, একাগ্রতা। রােগ, শােক, ব্যাধি জীবনীশক্তিকে স্তিমিত করে। লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তাই এসবকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। দেহ এবং মনকে রাখতে হবে সতত সচল। জীবনে যারা বড় হয়েছে তাদের জীবনী পড়ে আমরা জানতে পারি যে, কঠোর অনুশীলনের মধ্য দিয়েই তারা নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলেছেন।
কোনাে প্রকার হেঁয়ালিপনা, আলস্য এবং জরাজীর্ণতা তাদেরকে বাধা সৃষ্টি করতে পারে নি। যে আদর্শকে তারা বুকে ধারণ করেছেন সে আদর্শকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বময় শক্তি নিয়ােগ করেছেন। নির্ভীক যােদ্ধার মতাে অসীম সাহসে তাঁরা সম্মুখে অগ্রসর হয়েছেন। প্রত্যয়ের দৃপ্ত অঙ্গীকারে বেঁধে নিয়েছেন বুক। পাকাপােক্ত মাঝির মতাে হাল ধরে পাড়ি দিয়েছেন অকূল সমুদ্র। তাঁরা খুঁজে নিয়েছেন সুবর্ণ দ্বীপ।
আর যাদের কাজে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার অভাব ছিল, যারা বারবার আচ্ছন্ন হয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে, তারা কেউই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে নি। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনা অপূর্ণই রয়ে গেছে। হা-হুতাশ আর এক বুক দীর্ঘশ্বাস ছাড়া তারা জীবনে আর কিছুই সঞ্জয় করতে পারে নি। জীবনের বেলা শেষে নিয়তির হাতে নিজেদেরকে সমর্পণ করে তারা অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে। কিন্তু এমন জীবন কারাে কাম্য হতে পারে না।
তাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে চাই সুন্দর স্বপ্ন, চাই উঁচু আশা, চাই আত্মবিশ্বাস, চাই ত্যাগ, চাই নিষ্ঠা। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবনকে অনেক সুন্দরময় করে তােলা সম্ভব। প্রতিটি মানুষেরই সুন্দর জীবন, সুন্দর ভবিষ্যৎ একান্ত কাম্য। আর সে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রয়ােজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কঠোর পরিশ্রম। অনুশীলনই জীবনকে সুন্দর ও আনন্দময় করে তুলতে পারে, এবং তা অস্বাভাবিক কিছুই
নয়।