Skip to content

এভারেস্টে বাংলাদেশ – রচনা

  • by

এভারেস্টে বাংলাদেশ

(সংকেত: ভূমিকা, এভারেস্টের পরিচয়, এভারেস্টে প্রথম, এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশের সাফল্য, এভারেস্টে নারী ও অনুপ্রেরণা, এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশিদের সমস্যা, এভারেস্টে করুণ মৃত্যু, এভারেস্ট জয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, বহিঃর্বিশ্বে ভাবমূর্তি, উপসংহার।)

ভূমিকা:

অজানাকে জানা আর অচেনাকে চেনার আগ্রহ মানুষের জন্ম থেকেই। এই অদম্য আগ্রহ মানুষকে নিয়ে যায় সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। বাঙালি বীরের জাতি। কোনো বাঁধাই তাদের দমাতে পারেনি। পৃথিবীর সবোর্চ্চ পর্বতশৃঙ্গ আরোহণ করে তা আবার প্রমাণ করল। জয় আমাদের গৌরব ও অনুপ্রেরণার প্রতীক।

এভারেস্টের পরিচয়:

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম মাউন্ট এভারেস্ট। এভারেস্টের পূর্ব নাম পিক-বি এবং পরে নামকরণ করা হয় পিক-১৫। ১৮৯৯ সালে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়। এর উচ্চতা ৮,৮৫০ মিটার। এভারেস্ট শৃঙ্গের নেপালি নাম সাগরমাতা, তিব্বতি নাম চেমোলুংমা ও চীনা নাম কোকোল্যাংমা।

এভারেস্টে প্রথম:

২৯ মে ১৯৫৩ সালে নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি ও নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে এভারেস্টে প্রথম পা রাখেন। প্রথম নারী হিসাবে এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন ১৯৭৫ সালের ১৬ মে জাপানের জুনকো তাবেই। অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয় করেন অস্ট্রিয়ার পিটার হেবেলার এবং ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার।

বাঙালি হিসেবে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন ভারতের সত্যব্রত দাস, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহিম। আর প্রথম বাঙালি নারী হিসাবে এভারেস্ট জয় করেন ভারতের শিপ্রা মজুমদার ২০০৫ সালে। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসাবে নিশাত মজুমদার এভারেস্ট জয় করেন ১৯ মে ২০১২ সালে ।

এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশের সাফল্য:

হিমালয়ের কাছাকাছি দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশিদের কাছে হিমালয়ের চূড়া স্পর্শ করাটা ছিল রীতিমত একটা স্বপ্নের মতো। তারপর দীর্ঘদিন অনুশীলন ও পদে পদে মুত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ২০১০ সালের ২৩ মে এভারেষ্ট চূড়ায় পা রাখেন মুসা ইব্রাহিম। পরবর্তীতে বাংলাদেশের আরো চারজন এভারেস্টে পা রাখেন। নিম্নে বাংলাদেশি এভারেস্ট জয়ীদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো-

মুসা ইব্রাহিম:

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহিম ২৩ মে ২০১০ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ র্পবতশৃঙ্গ এভারেস্ট চূড়ায় পা রাখেন। তিনি ২০ শে এপ্রিল এভারেস্টের তিব্বত অংশে যাত্রা শুরু করেন। তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক।

এম. এ মুহিত:

মুসা ইব্রাহিমের পর এভারেস্টের চূড়ায় ২১ মে ২০১০ সালে লাল সবুজের পতাকা উড়ান এম.এ মুহিত। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯ মে ২০১২ সালে দ্বিতীয় বারের মতো এভারেষ্ট জয় করেন এম.এ মুহিত। তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। তিনি একমাত্র বাংলাদেশি যিনি উত্তর, দক্ষিণ উভয় দিক থেকেই এভারেস্ট জয় করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ভোলা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তিনি একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপনন কর্মকর্তা।

নিশাত মজুমদার:

বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে নিশাত মজুমদার ১৯ মে ২০১২ সালে এভারেস্ট চূড়ায় প্রথম পা রাখেন। তিনি ৫ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে লক্ষীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তিনি ঢাকা ওয়াসার একজন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।

ওয়াসাফিয়া নাজরিন:

সর্বকনিষ্ঠ ও দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২৬ মে ২০১২ সালে ওয়াসফিয়া নাজরিন এভারেষ্ট জয় করেন। তিনি ২৭ অক্টোবর ১৯৮২ সালে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন মানবসেবা ও উন্নয়নকর্মী।

সজল খালেদ:

বাংলাদেশের ৫ম ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মো. খালেদ হোসাইন, যিনি ‘সজল খালেদ’ নামেই পরিচিত। তিনি ২০ শে মে ২০১৩ সালে এভারেষ্ট জয় করেন। সেখান থেকে নামার পথে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৮,৬০০ মিটার উচুঁতে তার আকষ্মিক মৃত্যু হয়। তিনি ১৯৭৮ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন চলচ্চিত্রকার।

এভারেস্টে নারী ও অনুপ্রেরণা:

নারীরা আজ কোনো জায়গায় পিছিয়ে নেই শ্রমিককর্মী থেকে এভারেস্ট জয় পর্যন্ত সর্বত্রই তাদের বিচরণ। হিমালয় জয় মোটেই সহজসাধ্য নয়। বিশেষ করে নারী অভিযাত্রীদের জন্য তা আরো বিপদসঙ্কুল। দুর্গম বৈরী পরিবেশ বার বার তুষার ধ্বস ও তুষার ঝড়ের মধ্য দিয়ে এভারেস্টের বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশের নারীরা।

বাঙালি পুরুষেরা যেখানে পাহাড় ট্রেকিংয়ে হিমশিম খায় সেখানে বাঙালি নারীর পাহাড় জয় রীতিমত অবাক করা বিষয়। অথচ সেই কাজটি সম্পন্ন করেছেন বাঙালি নারী নিশাত মজুমদার। নারীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দৃঢ়সংকল্প আর প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে সবকিছুকে জয় করা সম্ভব। তাই বাংলাদেশের ললনাদের হাতের মুঠোয় এখন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এই জয় নারীদের মনোবল দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে।

এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশিদের সমস্যা:

বাংলাদেশিদের এভারেস্ট জয় অন্য যেকোনো দেশের মতো সহজ ব্যাপার নয়। বাংলাদেশিদের এভারেষ্ট জয় করতে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য শারীরিক সামর্থ্যের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত মাউন্টারিং। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান বিশেষ করে সমতল ভূমির একজন মানুষ হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণে সাফল্য সঙ্গত কারনেই অন্যদের চেয়ে আলাদা মূল্যায়নের দাবি রাখে।

তাছাড়া ভাটি অঞ্চলের মানুষ হিসেবে বাংলাদেশিদের রয়েছে উচ্চতাজনিত সমস্যা, হাইটোফোরিয়া-আলটিটিউন সিকনেস। তাছাড়া বাঙালি মন ভ্রমনপিপাসু নয়, একটু ঘরকুনো। ফলে ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশিরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠার চেয়ে সাগর অভিযানে বেশি আগ্রহী। তাছাড়া হিমালয় অভিযান ব্যয়বহুল। যা এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশিদের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক।

এভারেষ্টে করুণ মৃত্যু:

অর্থনীতিতে একটি কথা আছে- No risk no gain. মহৎ কিছু জয় করতে হলে ঝুকি নিতেই হবে। সব বড় কাজেই রয়েছে বড় ঝুঁকি। এই বড় বা মহৎ কাজের একটি এভারেষ্টের চূড়ায় আরোহন। এই এভারেষ্ট জয় করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে। ২৫ হাজার ফুট উঠার পর শরীরের কোষগুলো ভাঙতে থাকে।

ফলে অনেকে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। বাংলাদেশের ৫ম এভারেস্ট জয়ী সজল খালেদকে নামার পথে প্রাণ দিতে হয়েছে। এরকম অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখতে গিয়ে ২০০৯ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত ২১৬ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছে। তবুও মানুষ থেমে থাকেনি তাদের অভিযান থেকে।

এভারেস্ট জয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান:

এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তাই সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এভারেস্ট আরোহণকারীদের অধিক প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। আরোহণের ডেথ জোন সঠিকভাবে চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আরোহীদের মানসিক ও শারীরিক সামর্থ্যরে দিক পরীক্ষা করতে হবে, এইসব ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এভারেস্টে দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।

বহিঃর্বিশ্বে ভাবমূতি:

হিমালয়ের খুব কাছের দেশ হয়েও বাংলাদেশ অনেক পরে এভারেস্ট জয় করেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, সমতল ভূমির একজন মানুষকে হিসাবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করার সাফল্য বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। বাংলাদেশ কোনো কিছুতে কোনো দিন থেমে থাকেনি।

সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে জয় করে নিয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। লাল সবুজের বাংলাদেশের পতাকা এভারেস্টের চূড়ায় যা বিশ্ববাসির কাছে বাংলাদেশের যোগ্যতা ও সক্ষমতাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছে।

উপসংহার:

এভারেস্ট জয় গৌরব ও অহংকারের। এভারেস্টের বিজয় আমাদের চলার পথে অনুপ্রেরণা জোগায় আরো বড় কিছু অর্জন করতে। যত বাধা বিপত্তি আসুক না কেনো এভারেস্ট জয় করতে মানুষ সবসময় যাবে এভারেস্টের পাদদেশে। এভারেস্টের চূড়াকে পরাজিত করে বাংলাদেশ বারবার জয়ী হবে এই প্রত্যাশা সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *