Skip to content

# রচনাঃ “ফুটবল খেলা”

বাংলা দ্বিতীয় পত্র


ফুটবল খেলা

(সংকেত: ভূমিকা; ফুটবল খেলার ইতিহাস; বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার সম্প্রসারণ; মাঠের বর্ণনা ও খেলোয়াড়; ফুটবল খেলার পদ্ধতি; খেলার আইন কানুন; ফুটবল ও বাংলাদেশ; বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা); ফুটবল বিশ্বকাপ; ফুটবল খেলার উপকারিতা; বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল তারকা ও ক্লাবসমূহ; উপসংহার।)

ভূমিকা:

মানব মনের প্রশান্তি ও আনন্দদানের জন্য বর্তমান বিশ্বে যত খেলাধূলা প্রচলিত আছে তাদের মধ্যে ফুটবল খেলা অন্যতম। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল। ফুটবল খেলার জন্ম চীনে হলেও জনপ্রিয়তার কারণে এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি চার বছর পর পর আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশেই ফুটবল জাতীয় খেলার মর্যাদা লাভ করেছে। আমাদের বাংলাদেশের সর্বত্রই এই খেলার প্রচলন ও জনপ্রিয়তা দেখা যায়।

ফুটবল খেলার ইতিহাস:

ফুটবল একটি সুপ্রাচীন খেলা। সর্বপ্রথম চীন দেশে ফুটবল খেলার জন্ম হয়। ফুটবল খেলা ‘সকার’ নামেও পরিচিত। তবে আধুনিক ফুটবল খেলার প্রচলন ঘটে ইংল্যান্ডে। অতপর খেলাটি খুব দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার সম্প্রসারণ:

এটি আজ শুধু ইউরোপ আমেরিকা নয়, এটি সারা পৃথিবীব্যাপী সম্প্রসারিত হয়েছে। আমাদের স্কুল-কলেজে, মাঠে-ময়দানে, অলিতে গলিতে আজ ফুটবল খেলা হচ্ছে। গ্রাম থেকে শহরে সারাদেশ জুড়ে সবাই ফুটবল নিয়ে মেতে আছে। বর্তমান বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ফুটবল খেলা হয় না। ছোট বড় সবাই ফুটবল খেলা যেমন বুঝতে পারে তেমনি খেলা দেখে বা খেলে গ্রহণ করে অপার আনন্দ। ফুটবলের প্রভাব আজ বিশ্বব্যাপী লক্ষণীয়।

মাঠের বর্ণনা ও খেলোয়াড়:

এই খেলার জন্য ১০০-১২০ গজ দীর্ঘ এবং ৫০-৫৬ গজ প্রস্থ একটি সমতল মাঠের প্রয়োজন। মাঠের দুই প্রান্তে দু’টি করে গোলপোস্ট থাকে। প্রতিটি গোলপোস্ট এর উচ্চতা ৮ ফুট এবং একটি বার বা খুঁটির অপরটি থেকে ৮ গজ দূরে অবস্থিত। একটি আদর্শ ফুটবলের ওজন সাধারণত ১৪-১৬ আউন্স হয়ে থাকে। ফুটবল খেলার জন্য মোট ২২ জন খেলোয়াড় প্রয়োজন হয়, যারা প্রতি দলে ১১ জন করে বিভক্ত হয়ে খেলে থাকে। খেলা পরিচালনার জন্য একজন প্রধান রেফারি ও তাকে সাহায্যের জন্য দু’ জন লাইন্সম্যান থাকে।

ফুটবল খেলার পদ্ধতি:

খেলার জন্য মাঠের মধ্যস্থলে দুই দল মুখোমুখি অবস্থান করে। রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথে খেলা শুরু হয় এবং প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের অবস্থানে চলে যায়। সাধারণত ১১ জন খেলোয়াড়ের পাঁচ জন সামনের ভাগে দাঁড়ায় যাদেরকে বলে ফরোয়ার্ড, তাদের পিছনে ৩ জন থাকে মিডফিল্ডার বা হাফ ব্যাক, তাদের পিছনে দু’ জন থাকে ডিফেন্স বা ফুল ব্যাক আর গোলবারের সামনে থাকে একজন গোলরক্ষক, যিনি সর্বাঙ্গ দিয়ে বলকে গোল হওয়া থেকে রক্ষা করেন। মাঝের বিরতি ছাড়া ৪৫ মিনিট করে মোট ৯০ মিনিট হলো একটি ফুটবল ম্যাচের ব্যপ্তি।

খেলার আাইন কানুন:

অন্যান্য খেলার ন্যায় ফুটবল খেলার নির্দিষ্ট কতকগুলো আইন-কানুন আছে। এসব নিয়মনীতি সবই ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা কর্তৃক প্রণীত। যেমন প্রথমে বলটি মাঠের মধ্যস্থলে রাখতে হবে। রেফারি বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু করতে হবে। একমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কেউ বল হাত দিয়ে ধরতে বা মারতে পারবে না। এ নিয়ম না মানলে হ্যান্ডবল হয় এবং বিপক্ষ দলের দিকে বল ফ্রি কিক মারা হয়। অবৈধভাবে কাউকে লাথি বা ধাক্কা মারা যাবে না, মারলে রেফারি শাস্তি স্বরূপ উক্ত খেলোয়াড়কে লাল বা হলুদ কার্ড দেখিয়ে শাস্তি দেন। লাল কার্ড পেলে ঐ খেলোয়াড় আর খেলতে পারেন না। ১৯৮৪ সাল থেকে এ কার্ড দেখানোর নিয়ম প্রচলিত হয়। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের সহজেই চিনতে ১৯৩৫ সাল থেকে জার্সি নাম্বার চালু হয়।

ফুটবল ও বাংলাদেশ:

বিদেশি খেলা হলেও ফুটবল খেলা বাংলাদেশের প্রায় সব শ্রেণি পেশার লোকই বুঝতে সক্ষম বলে এ খেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বকাপ এলেই সারাদেশ জুড়ে শুরু হয় ফুটবল উন্মাদনা। পতাকা টানিয়ে বা সমর্থিত দলের জার্সি গায়ে দিয়ে দলের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে বাঙালিরা। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ফিফার সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশ প্রতিবারই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অংশ নেয়। যদিও বাংলাদেশ কোনো বারই বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারেনি, তথাপি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সাফ গেমস্ এ মালদ্বীপকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া ১৯৯৯, ২০১০ সালে বাংলাদেশ S.A গেম্সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করে। জাতীয়ভাবে বাংলাদেশ ফুটবলের অগ্রগতির জন্য ১৯৯৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আয়োজন করে। আবাহনী, ফেনী সকার ক্লাব, শেখ জামাল, মোহামেডান বাংলাদেশের অন্যতম ফুটবল ক্লাব।

বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা):

বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রচলন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় FIFA (Federation of International Football Association). ২১ মে, ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংস্থাটি। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এটির সদরদপ্তর। ফিফা এর বর্তমান সভাপতি সেপ ব্লাটার। ফিফার বর্তমান সদস্য ২০৯টি। এ সংস্থা প্রতি ৪ বছর পর পর আয়োজন করে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। পুরুষদের ন্যায় নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপেরও প্রতিনিধিত্ব করে এ সংস্থা। প্রতিবছর এ সংস্থা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচন ও দলগত র‌্যাংকিং করে থাকে।

ফুটবল বিশ্বকাপ:

এ খেলার ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ফিফার অধীনে প্রতি ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফির নাম ছিল জুলেরিমে কাপ। ১৯৭৪ সালে এ ট্রফির নাম হয় ফিফা বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২০তম আসর। এ আসরে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়কে গোল্ডেন বল এবং সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট সম্মাননা দেওয়া হয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর হবে রাশিয়ায় এবং ২০২২ সালের ২২তম আসর হবে কাতারে।

ফুটবল খেলার উপকারিতা:

ফুটবল খেলা শুধু খেলা নয়, এটির মাধ্যমে যেমন আনন্দ-বিনোদন পাওয়া যায়, তেমনি এ খেলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে থাকে। তাছাড়া ফুটবল খেলা আজ বিশ্বব্যাপী বিশাল লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার ফুটবল ক্লাবগুলো ফুটবল বাণিজ্যের অন্যতম উদাহরণ। ফুটবল খেলার মাধ্যমে যেমন মানসিক অবসাদ দূর হয় তেমনি এর উত্তেজনা-উপভোগ মনকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। ফুটবল খেলতে যথেষ্ট ছুটাছুটি ও পরিশ্রম করতে হয় বলে শরীর সর্বদাই ফিট থাকে। খেলার কঠোর আইন-কানুন খেলোয়াড়দের চারিত্রিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। একজন ভালো খেলোয়াড় এটির মাধ্যমে যেমন বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে তেমনি প্রচুর অর্থেরও মালিক হয়। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ধনী ফুটবল খেলোয়াড় আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি।

বিশ্বের শীর্ষ ফুটবল তারকা ও ক্লাবসমূহ:

বিশ্ব ফুটবলের জগতে জীবন্ত কিংবদন্তী হলো ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের পেলে। তাছাড়া আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা ফুটবলের রাজপুত্র নামে পরিচিত। এ ছাড়া রোনাল্ডো, মেসি, নেইমার, জিদান বর্তমান ফুটবলের অন্যতম তারকা। বার্সালোনা, রিয়েল মাদ্রিদ, বায়ান মিউনিখ, ডর্টমুন্ড, চেলসি, ম্যানচেষ্টার সিটি প্রভৃতি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব। কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশন কাপ, এশিয়া কাপ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস্ লীগ, SA গেমস, সাফ গেমস প্রভৃতির মাধ্যমে ফুটবল সারা পৃথিবীতে উন্মাদনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।

উপসংহার:

ফুটবল খেলা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের কাছে এক অনাবিল আনন্দের উৎস। ফুটবল খেলায় থাকে হার-জিত, থাকে আনন্দ-বেদনার অশ্রু। সেই আনন্দ বেদনার ঊর্ধ্বে থাকে মনোরম লড়াই আর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন, স্বদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি আর বিজয়ের তীব্র বাসনা। ফুটবল খেলা বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে প্রীতি-সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। এ জন্যই ফুটবল খেলা সকল খেলাকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *