Skip to content

রচনাঃ বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন

বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন

“ আলাে আলাে, আলাে আলাে,
ছিন্ন করাে কৃষ্ণ আচ্ছাদন,
দৃষ্টির সম্মুখ হতে।” –অজিত দত্ত

ভূমিকা:

বৈজ্ঞানিক ভােলার বিদ্যুৎশক্তি ‘ আবিষ্কার করে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কালজয়ী অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। বিদ্যুতের ঐন্দ্রজালিক শক্তি মানবজীবন ও সভ্যতার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। গােটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে মানুষের নখদর্পণে ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। বিদ্যুতের কল্যাণে আধুনিক জীবন হয়ে ওঠেছে অত্যাধুনিক। বিদ্যুতের অনুপস্থিতি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাকে করে তােলে দুর্বিষহ এবং পরিবেশকে করে অন্ধকারাচ্ছন্ন। বস্তুত প্রযুক্তি, শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, সমাজ উন্নয়ন— এক কথায় আধুনিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তিই হচ্ছে সাফল্যের চাবিকাঠি। বিদ্যুৎ সংকটের অর্থ তাই সামাজিক সংকট, দেশ ও জাতির অস্তিত্বের সংকট।

সভ্যতার ক্রমবিকাশে বিদ্যুৎ:

আধুনিক, সভ্য ও উন্নত জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলেই মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, সমাজের নব নব বিকাশের পথ হয়েছে প্রশস্ত। আধুনিক শিল্প ও সভ্যতার প্রাণশক্তিই হচ্ছে এই বিদ্যুৎ। সভ্যতার বিকাশে ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে বিদ্যুতের অবদান অকল্পনীয়। বিদ্যুৎ ছাড়া একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। তাই বিদ্যুৎকে সভ্য জীবনের চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

অসাধ্য সাধনে বিদ্যুতের ভূমিকা:

বিদ্যুৎ একটি শক্তি এবং সে শক্তি সত্যিই অকল্পনীয় বা অপরিমেয়। মানুষের জীবনকে সর্বাঙ্গসুন্দর করতে বা মানুষের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময়’ ও সমৃদ্ধশালী করতে বিদ্যুৎ অভূতপূর্ব অবদান রাখছে। যত কলকারখানা, যান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয় সেখানে বিদ্যুৎ একক ও বলিষ্ঠ। এর কোনাে অন্যথা হয় না। সহজ কথায় বলতে গেলে মানুষের যত দুরূহ কাজ বিদ্যুৎ তা অকল্পনীয়ভাবে এবং ততােধিক অকল্পনীয় কম সময়ে করে দিচ্ছে, এখানেই বিদ্যুতের বাহাদুরী।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার:

আমাদের প্রতিদিনকার কাজকর্ম, সে গ্রামীণ জীবন থেকে শুরু করে শহরের যান্ত্রিক জীবন পর্যন্ত ব্যাপ্ত যাপিত জীবনে বিদ্যুৎ অপ্রতিহত গতিতে রাজত্ব করে চলেছে। বিদ্যুতের বাতি জ্বালানাে, পানি সরবরাহের মেশিন চালানাে, গ্রামীণ জীবনে সেচকার্যের জন্য পাম্প চালানাে, বিনােদনের জন্য টিভি, রেডিও, টেপরেকর্ডার চালানাে, ভিসিআর, ভিসিডি চালানাে প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ এক অপরিহার্য শক্তি। অবশ্য গ্রামীণ প্রেক্ষিত থেকে শহরের ইটের পরে ইটের মাঝে মানুষ নামের বাস করা কীটেরা বিদ্যুৎ বেশি অপরিহার্যরূপে ব্যবহার করে থাকে।

শহরের মানবিক জীবন মুহূর্তের বিদ্যুতের অনুপস্থিতি ভুতুড়ে পরিবেশের আবেশ তৈরি করে ফেলে। মানুষ হাফিয়ে ওঠে। নিঃশ্বাস ফেলতেও কষ্টবােধ করে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ প্রভৃতিকে আলােকিত করতে, অনুষ্ঠানাদিতে ঘরদোর, দোকানপাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আলােকমালায় সজ্জিত করতে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। অফিস আদালতে, খবরের কাগজের অফিসে, বিদ্যুতের সর্বাধিক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। রান্নাঘরের কাজেও বিদ্যুতের ব্যবহার কম নয়। রান্নার জন্য রয়েছে কুকিং রেঞ্জ, মশলাবাটা ও নানা খাদ্য গুঁড়া করার মেশিন, রয়েছে বাসন ও কাপড় ধােয়ার যন্ত্র— এগুলাে চালনা করতে বিদ্যুৎ প্রয়ােজন হয়। ধনীদের গৃহে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। বিদ্যুতের গুরুত্ব ও উপযােগিতা সম্বন্ধে আজ আর কারও মনে সংশয় নেই। বিদ্যুতের অভাবে আজ শহুরে জীবনের পাশাপাশি অনেক গ্রামেও জীবন যাপন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

শিল্পোন্নয়নে বিদ্যুৎ:

শিল্পোৎপাদন, কৃষিকাজ, মুদ্রণ শিল্প, সংবাদ আদানপ্রদান, যানবাহন ও যােগাযােগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষাক্ষেত্র সর্বত্রই বিদ্যুতের যােগান চাই। শিল্পোন্নয়ন ছাড়া আধুনিক উন্নত জীবন যাপন সম্ভব নয়। কিন্তু শিল্পের উন্নয়ন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়ােজন বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ব্যতীত শিল্পকারখানা চলতে পারে না। আর শিল্পোৎপাদন বন্ধ হলে অত্যাধুনিক জীবন যাপনও সম্ভব নয়। কেননা, শহুরে মানুষের নিত্য প্রয়ােজনীয় অনেক কিছুই শিল্পকারখানার ফসল। তাই শিল্পোন্নয়ন ও আধুনিক উন্নত জীবনের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অবদান অনস্বীকার্য।

চিকিত্সক্ষেত্রে বিদ্যুৎ:

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিদ্যুৎ তাে, এক অপরিমিত অবদান রেখেছে। এ অবদান অবিস্মরণীয়। যে রােগব্যধিকে মানুষ সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত মনে করত, যেমন: কারও যক্ষ্মা ধরা পড়লে বলত, ‘রক্ষা নেই। অর্থাৎ, যক্ষ্মাকে বলত ক্ষয় রােগ। আবার ক্যান্সারকে বলত ‘ ননা এসার ’। এ সমস্ত দুরারােগ্য রােগ বালাইসমূহ নিয়ন্ত্রণে বা চিকিৎসায় যে সমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, তার সবগুলােই বিদ্যুৎচালিত। তদ্রুপ অপারেশন থিয়েটার তাে বিদ্যুৎ ছাড়া অচল। যক্ষ্মা, ক্যান্সারের মতাে আলসার, কিডনী অচল বা নষ্ট, কিডনীতে পাথর, পিত্তথলিতে পাথর প্রভৃতি রােগের চিকিৎসাখাতে, বা অপারেশনে যে যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়ে থাকে, তার প্রত্যেকটিই বিদ্যুৎ চালিত। সর্বোপরি যে কথা স্বীকার করতে হয় যা ছাড়া চিকিৎসা চলে না তা হলাে ঔষধ, এ ঔষধের কারখানাই তাে বিদ্যুৎ ছাড়া অচল কতগুলাে লােহালক্কর ছাড়া আর কিছু কিছু নয়।

বিদ্যুতের অপকারিতা:

বিদ্যুতের শুধু কল্যাণকর দিক বা উপকারিতাই আছে তা নয়, এর অপকারিতাও কম নয়। একটি উদাহরণই এ ব্যাপারে যথেষ্ট হবে যে, বিদ্যুতের শটসার্কিটের ফলে, বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর শত শত জীবন, হাজার হাজার স্ফুটনােন্মুখ জীবনকলি অকালেই নির্বাপিত হচ্ছে। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুন লেগে শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস, বাড়িঘর প্রভৃতি ভস্মীভূত হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি টাকার জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, বিদ্যুতের এই যে অপকার এর তুলনায় বিদ্যুতের অবদান অতি বড়। অবদানের তুলনায় অপকার খুবই নগণ্য বা বলা যায় প্রায় শূন্যের কোঠায়। |

উপসংহার:

সবশেষে বলা যায় আধুনিকতম জীবন ব্যবস্থায়, মানুষের যাপিত জীবনযাত্রায় বিদ্যুৎ এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখছে। মানবজীবনের প্রতিটি ছন্দে স্পন্দন দিচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের মােহময় পরশ ছাড়া জীবনের চলমানতা, গতিশীল ছান্দিক পদচারণা, সকল কাজকর্ম, বিনােদন, আরাম-আয়েশ, কোনােকিছুই সম্ভব হতাে না, সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে অসীম ক্ষমতার আধার এ বিদ্যুতের কল্যাণে। আমাদের মানবসভ্যতার এ লগ্নে, আমরা এতটাই বিদ্যুৎ নির্ভর হয়ে পড়েছি যে, কোন কাজই আমরা এখন বিদ্যুতের সাহায্য ছাড়া করতে পারি না। বিদ্যুৎকে বাদ দিয়ে কোন উচ্চ জীবন বা অভিলাষকে চরিতার্থ করতে পারছি না। তাই বিদ্যুৎ সম্পর্কে বলা হয় ” Electricity is the key to Human Civilization.”


আরও কয়েকটি রচনাঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *