আলাে বলে, ‘ অন্ধকার, তুই বড় কালাে
অন্ধকার বলে, “ ভাই, তাই তুমি আলাে’।
ভাব-সম্প্রসারণ: যেকোনাে জিনিসের ভালাে এবং মন্দ দুটো দিক আছে। আর এটা আছে বলেই একটি আরেকটির চেয়ে মহান এবং উপভােগ্য। অবিমিশ্র সুখ, আনন্দ বা সৌন্দর্য জগতের নিয়ম নয়। এদের পাশাপাশি রয়েছে দুঃখ– দৈন্য, ব্যথা-বেদনা, শােক-তাপ ও মালিন্য কুশ্রীতা। বৈচিত্র্যের অপূর্ব সমাবেশেই জীবন এবং জগৎ গড়ে উঠেছে। আমরা অনেক সময় ভুলে যাই যে, দুঃখ আছে বলেই সুখ এত মহান, এত মধুর।
দুঃখ ও সুখ পাশাপাশি অবস্থান করে। দুঃখের পরে সুখ আসে, সুখের পরে দুঃখ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বনাই প্রেমকে স্বর্গীয় সুধা দান করে। যদি এমন হতাে যে, পৃথিবীতে কখনাে সূর্য অস্ত যাবে না, অহােরাত্র সূর্যালােকে চারদিক আলােকিত থাকবে, তাহলে তার কি কোনাে মূল্য থাকত? অন্ধকার এসে দিবালােককে গ্রাস করে বলেই পরদিন প্রভাতের সােনালি অরুণােদয় এমন করে আমাদের সকলের চিত্ত হরণ করে। আঁধার আছে বলেই দিনের আলাে বৈচিত্র্যহীন, বৈশিষ্ট্যহীন হয়ে পড়ে না।
যদি অভাববােধ না থাকত তবে মানবপ্রগতি বহুকাল আগেই থেমে যেত। অতৃপ্তি না থাকলে জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষ ঘটে না। মহৎ বেদনা না থাকলে মহৎ কাজ কোনাে দিনই সৃষ্টি হতে পারত না। আলাের রূপ ও সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য যেমন অন্ধকার প্রয়ােজন। তেমনি দুঃখ-বেদনার উপস্থিতির জন্যই জীবনে সুখ আনন্দ এত কাম্য। সব জীবন যদি অটুট সুখ আনন্দে পূর্ণ হয়; তাহলে সুখ-আনন্দের কোনাে অনুভূতিই থাকে না।
দুঃখ আছে বলেই সুখ এত বাঞ্ছনীয়। মনে রাখা উচিত যে, আঘাতই সান্ত্বনাকে মধুর করে তােলে। বঞ্চনাই স্বর্গীয় সুধা দান করে। যদি এমন হতাে যে, কখনাে সূর্য অস্ত যেত না, সারারাত্র সূর্যালােকে পৃথিবী প্লাবিত থাকত, তা হলে তার কি কোনাে মূল্য থাকত? তাই আলাের রূপ ফুটিয়ে তােলার জন্য যেমন অন্ধকার একান্ত অপরিহার্য, দ্রুপ দুঃখ, বেদনা ও, অভাবের তীব্র জ্বালা আছে বলেই আমাদের জীবনে সুখ, আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য এত কাম্য। তাই কবি বলেন
“ দুঃখ তুমি পরম মঙ্গল
তােমারি দহনে আমি হয়েছি উজ্জ্বল।”
-(কুমুদরঞ্জন মল্লিক)
প্রকৃতপক্ষে জগতে যদি বৈচিত্র্য না থাকত তাহলে সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনা ইত্যাদি অনুভূতির কোনাে অস্তিত্বই থাকত না। তাই এ জগতে কোনাে কিছুই মূল্যহীন নয়। আলাে ও অন্ধকার, সুখ ও দুঃখ, সৌন্দর্য ও কদর্যতা একে অপরের পরিপূরক। অসুন্দরের জন্যই সুন্দরকে, অভাব-অপ্রাপ্তির জন্যই প্রাপ্তিকে আমাদের এত ভালাে লাগে, তেমনি অন্ধকারের কারণেই আলাে সত্য হয়ে ওঠে।