কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধু কেউই নেই
ভাব-সম্প্রসারণ: দায়িত্বশীল কর্তব্য কর্মের কাছে আপন পর সবাই সমান। কর্তব্য সম্পাদনই আসল কথা। কর্মময় পৃথিবীটা মানবের কর্তব্যসচেতনতা দ্বারা শাসিত হচ্ছে সর্বদা। অপরাধ ভাই ও বন্ধু ও করতে পারে। তাই বলে আপন ভেবে তাদেরকে বিনা বিচারে ক্ষমতার দাপটে ছেড়ে দিলে সেখানে কর্তব্যকে অবমাননা করা ছাড়া কিছুই হয় না। যে যেখানে থাকে তার সেখানে কিছু কর্তব্য থাকে।
জীবনের প্রভাত বেলা থেকেই কর্তব্যবােধের অর্থ অনুধাবন করতে হয়; তাহলেই জীবন সংগ্রামে যথােচিত সম্মান ও মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট হওয়া যায়। মহাপুরুষ মাত্রই কর্তব্যের কাছে নতিস্বীকার করেন; ফলে তাঁদের কর্তব্যের সফলতার পথে যেকোনাে বাধাই আসুক না কেন তারা অবলীলায় তা অতিক্রম করেন। এমনকি নিজের রক্তের সম্পর্ক ভাইও তাদের কর্তব্যের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষের সবচেয়ে প্রিয় তার ভাই, বন্ধু অথবা ছেলে। কিন্তু কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তি মাত্রই কর্তব্য কর্ম সম্পাদনের পথে ভাই, বন্ধু তথা নিজ স্বার্থের কোনাে প্রতিবন্ধকতাকেই গ্রাহ্য করেন না।
সমাজ সংসারে কর্তব্যনিষ্ঠ বহু লােক আছেন, তাঁদের জীবনের চাকা কর্তব্যবােধের পীড়নে সুষ্ঠুভাবে ঘুরতাে বলে আজ তারা নিজ নিজ লক্ষ্যে সফলকাম হয়েছেন। পৃথিবীর কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তিরূপে খ্যাত ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে তারা আপন পর নির্বিশেষে কর্তব্য কাজে রত থাকতেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রা) ইসলামের অমােঘ নিয়ম অনুযায়ী মদ্যপানের অপরাধে নিজের ছেলেকে দোরা মারার আদেশ দেন। কর্তব্যের কাছে তিনি নতি স্বীকার করেননি। সারা জাহানের খলিফাও কর্তব্যের কাছে নিজের ছেলেকেও ছেড়ে দেন নি।
তাই কর্তব্যের কাছে আপন পর নির্বিশেষে সবাই সমান। বিচারের ক্ষেত্রেও এটা প্রযােজ্য। দণ্ডিত ব্যক্তি যেই হােন। কেন তাকে আইনের নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুযায়ী বিচার করতে হবে। আপন ভেবে ছেড়ে দিলে কর্তব্য কাজ সম্পাদন হবে না। নিরপরাধী ব্যক্তিও যদি বিচারকের নিকট ঘৃণিত হয় তবুও কর্তব্যের খাতিরে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। তাই যথার্থই বলা হয়েছে, কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধু সবাই সমান। এজন্য হাজারাে বিপদ আসলেও কর্তব্য কাজে অবহেলা করতে নেই। আমাদের সবারই কর্তব্যপরায়ণ হওয়া উচিত। তাহলেই জীবনে সাফল্য অনিবার্য হয়ে দেখা দেবে।