নানান দেশের নানান ভাষা
বিনা স্বদেশী ভাষা পুরে কি আশা?
ভাব-সম্প্রসারণ: মাতৃভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার এবং এ ভাষায় সে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি লাভ করে। বিশ্বজুড়ে হাজারও ভাষা প্রচলিত থাকলেও মায়ের ভাষায় তথা স্বদেশি ভাষায় যে কী তৃপ্তি, কী সুখ তা কেবল উপলদ্ধিযােগ্য। আশা আকাঙ্ক্ষার সঠিক বহিঃপ্রকাশ কেবল মাতৃভাষাতেই সম্ভব। মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। তারা চিন্তা ভাবনা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয় ভাষার মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছেন,“ আলাে দিয়ে আলো জ্বালা ‘।
এভাবে পূর্ববর্তী মানুষের ভাব ভাবনা ভাষায় লিখিত রূপের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যায়। এভাবেই একের জ্ঞান অনন্য উপলদ্ধি করে করে গড়ে তুলেছে সভ্যতা। পৃথিবীতে এক দেশের মানুষের সাথে অন্য দেশের মানুষের চেহারার যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি ভাষারও রয়েছে পার্থক্য। নানান ধরনের চেহারার মতাে পৃথিবীতে রয়েছে নানান জাতির মানুষের নানান ভাষা।
একেক দেশের মানুষ একেক ভাষা ব্যবহার করে। মানুষ যে দেশে জন্মগ্রহণ করে এবং মাতাপিতা যে ভাষা ব্যবহার করে, সেটাই সাধারণত তার মাতৃভাষা। মাতৃভাষার মাধ্যমেই শিশুর বিকাশ সহজ ও সরল হয়। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ সমস্ত জ্ঞানের বিষয় সবচেয়ে বেশি উপলদ্ধি করে এবং প্রকাশে সক্ষম। আমরা মাতৃভাষার সাথে সাথে অন্য ভাষাও আয়ত্ত করি। কিন্তু অন্য ভাষায় কিছু বুঝতে হলেও মাতৃভাষার মাধ্যমেই করে থাকি।
মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা, অবহেলা করে কেউ কোনােদিন তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে না। আমাদের মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। তিনি মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে অন্য ভাষায় তথা ‘ বিনা স্বদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে পেয়েছেন প্রতি পদে পদে আঘাত, দুঃখ, কষ্ট। শেষ পর্যন্ত মা সম মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছেন বঙ্গভাষা’, কপােতাক্ষ নদ ‘। যা তাঁকে অমর করে রাখল।
মূলত মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষাতে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় না তার বাস্তব প্রমাণ রেখে গেলেন মহাকবি মধুসূদন। এ মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য বাংলার মানুষ রক্ত দিযেছে, উৎসর্গ করেছে জীবন। যারা দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকে, বিদেশি ভাষায় কথা বলে কাজ চালালেও, তাদের আত্মতৃপ্তি ঘটে স্বদেশি ভাষাভাষীর সাথে কথা বলে। তাছাড়া আত্মবিকাশে মাতৃভাষার কোনাে বিকল্প নেই।
মিল্টন পাহাড়ি ঝর্নার কলধ্বনিতে মাতৃভাষার সুর শুনতে পেতেন। মাতৃভাষা মানবজীবনে, জাতীয় জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমরা মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। সর্বোপরি একটি মানুষ নানা ভাষায় পণ্ডিত হলেও, কেবল মাতৃভাষাতেই সে পরিতৃপ্ত হয়, মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটে তার পূর্ণ বিকাশ। মা ও মাতৃভূমি যেমন সবচেয়ে প্রিয়, তেমনি মাতৃভাষা অর্থাৎ স্বদেশি ভাষাও প্রত্যেকের সমান প্রিয়। কারণ মাতৃভাষাই মনের ভাব প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তাই প্রত্যেক জাতির কাছেই তার মাতৃভাষা মহামূল্যবান।