বাংলা দ্বিতীয় পত্রঃ সমাস
সমাস কী
’সমাস’ শব্দের অর্থ সংক্ষেপন, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। সমাস শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্য সমাসের সৃষ্টি। অর্থের দিক থেকে মিল আছে এমন দুই বা ততোধিক পদের একপদে পরিণত করাকে সমাস বলে। যেমন : চাঁদের ন্যায় মুখ=চাঁদমুখ।
সমাসের সজ্ঞা :
পরস্পর অর্থসঙ্গতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদকে একপদে পরিণত করাকে সমাস বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অর্থ-সম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বড় শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। যেমন : পদ দ্বারা দলিত=পদদলিত। জায়া ও পতি = দম্পতি।
সমাসের পরিভাষাঃ
সমাস নির্ণয় করতে প্রথমে শিক্ষার্থীদের সমাসের পরিভাষা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। নিচে একটি উদাহরণ দেওয়া হলোঃ
ঘরে আশ্রিত জামাই = ঘরজামাই
সমাসে পরিভাষা ৫ অংশে বিভক্ত।
১. সমস্তপদ : সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পাদকে সমস্তপদ বলে। উপরের ছকে ‘ঘরজামাই’ সমাসবদ্ধ রয়েছে বলে পদটি সমস্তপদ।
২. পূর্বপদ : সমস্তপদের পূর্ব বা আগের পদকে পূর্বপদ বলা হয়। উপরে ঘরজামাই পদটি দুটির মধ্যে পথম বা আগের পদ ‘ঘর’ হলো পূর্বপদ।
৩. পরপদ বা উত্তরপদ : সমস্তপদের শেষ বা পরের পদটিকে পরপদ বলে। উপরে ’জামাই’ পদটি শেষে থাকায় এটি পরপদ বা উত্তরপদ বলে।
৪. ব্যসবাক্য : সমস্তপদকে ভাঙলে যে বাক্যংশ তৈরি হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলে। উপরে ’ঘরজামাই’ ভেঙে ‘ঘরে আশ্রিত জামাই’ বাক্যাংশ তৈরি করা হয়েছে, তাই ’ঘরে আশ্রিত জামাই’ এ বাক্যাংশটি ব্যাসবাক্য। ব্যাসবাক্যের অপর নাম বিগ্রহবাক্য বা সমাস বাক্য বলা হয়।
৫. সমস্যামান পদ : যেসব পদের সমম্বয়ে সমাস হয় তাদের প্রত্যেকটিকে সমস্যমান পদ বলে। উপরে ‘ঘরে’ ও ‘জামাই’ এ দুটি পদের সমন্বয়ে সমাস সাধিত হয়েছে বলে এ দুটি পদ সমস্যমান পদ।
সমাসের প্রকারভেদ
সমাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সমস্যমান পদ দুটি কোথাও দুটিই বিশেষ্য বা বিশেষণের সংযোগ, কোথাও তা বিশেষ্য-বিশেষণ ভাবাপন্ন; কোথাও তাদের একটি অব্যয়, কোথাও সমস্যমান পদ দুটি নিজেদের অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কিছুকে বুঝিয়ে থাকে। সমাসের এসব ভিন্নতা দেখে প্রচলিত নিয়মনুসারে সমাসকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. দ্বন্দ্ব সমাস : ’দ্বন্দ্ব’ শব্দের অর্থ জোড়া বা মিলন। ‘দ্বন্দ্ব’ সমাস মানে মিলনের সমাস। যে সমাসে দুই বা ততোধিক পদের মিলন হয় এবং সমস্যমান প্রত্যেক পদের অর্থই প্রধান থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন :
- মাতা ও পিতা=মাতা-পিতা।
- দোয়াত ও কলম = দোয়াত-কলম।
- পোকা ও মাকড় = পেকা-মাকড়।
২. কর্মধারয় সমাস : বিশেষ্য ও বিশেষণ পদে বা বিশেষ্য বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদে যে সমাস হয় এবং সেখানে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন:
- নীল যে আকাশ=নীলাকাশ,
- ফুলের মত কুমারী = ফুলকুমারী।
৩. তৎপুরুষ সমাস : যে সমাসের পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধানরুপে প্রতীয়মান হয়, তকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :
- ভারকে প্রাপ্ত = ভারপ্রাপ্ত,
- ধানের ক্ষেত=ধানক্ষেত।
৪. বহুব্রীহি সমাস : যে সমাসের সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে সমস্তপদের অন্য কোন ব্যক্তি, বস্তু, পদার্থকে বুঝায় অর্থাৎ অন্য পদের অর্থ প্রধান হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন:
- বীণা পাণিতে যার=বীনাপাণি।
৫. দ্বিগু সমাস : সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে বসে সমষ্টি, সমাহার বা মিলন বোঝালে এবং পরপদের অর্থই প্রধানরুপে প্রতীয়মান হলে তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন:
- সে তারের সমাহার = সেতার।
- ত্রি ফলের সমাহার=ত্রিফলা।
- শত অব্দের সমাহার=শতাব্দী।
৬. অব্যয়ীভাব সমাস : ‘অব্যয়ীভাব’ অর্থ অব্যয়ের ভা বর্তমান। যে সমাসে পূর্বপদে অব্যয় থাকে এবং অব্যয়ের অর্থই প্রধান থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন:
- কণ্ঠের সমীপে = উপকন্ঠ।
- বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল।
- রীতিকে অতিক্রম না করে = যথারীতি।