সেই ধন্য নরকুলে লােকে যারে নাহি ভুলে
মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন।
ভাব-সম্প্রসারণ: মানুষের গর্ভে জন্মালেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হতে চাই কঠিন অধ্যবসায়। এ সাধনায় উত্তীর্ণ মানুষই প্রকৃত মানুষ। সে ধন্য, সে আরাধ্য, পৃথিবীময় তার জয়গান, লােকের অন্তরে তার বাস, মনের মন্দিরে পায় পূজা, বেঁচে থাকে অনন্তকাল। যারা পরােপকারে জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে কীর্তি স্থাপন করে গেছেন। তারা কীর্তিমান। তাঁরা মরেও অমর হয়ে আছেন।
মানুষ মরণশীল; এটি চিরন্তন সত্য। তবুও যাঁরা কীর্তিমান তাঁরা তাঁদের সেবামূলক সঙ্কর্মের মাধ্যমে মানবসমাজে বেঁচে থাকেন বহু যুগ ধরে। তাদেরকে সাধারণ মানুষেরা মনের মন্দিরে রেখে পূজা করে। মানুষ অমরত্ব প্রাপ্ত হয় তাঁর সৎ কর্মের মাধ্যমে। কর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে সাধারণ মানুষের অন্তরে চিরদিন। অর্থাৎ যেসব মানুষ নিঃস্বার্থভাবে পরােপকারে আত্মনিয়ােগ করেন, মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন— মৃত্যুর পরেও তারা অমর হয়ে থাকেন মানুষের মাঝে।
এভাবে কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব তাদের সঙ্কর্মের জন্য অমরত্ব প্রাপ্ত হন। এসব লােকের দৈহিক মৃত্যু হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা অমর। সর্বদাই তারা মানবের অন্তরে বিরাজ করেন। মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের জীবনাদর্শই যুগ যুগ ধরে মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে। সুতরাং তাদের মৃত বলে মনে হয় না।
মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে, তার বয়সের মধ্যে নয়। কত কোটি কোটি মানুষ এ পৃথিবীতে এসেছে। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর কেউ তাদেরকে মনে রাখতে পারে নি। তারা ভেসে গিয়েছে কালস্রোতে। তবু যেসব কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গ মানুষের সেবায় আত্মনিয়ােগ করে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা অমর। তাই সক্রেটিস, প্লেটো, গ্যালিলিও প্রমুখ কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের মৃত্যু হয়েছে বহুদিন পূর্বে কিন্তু তারা আজও চির ভাস্বর মানুষের হৃদয়ে। তাই কীর্তিমান ব্যক্তিগণই মানুষের মধ্যে ধন্য।