জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান
ভাব-সম্প্রসারণ: যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে নি সে নির্বোধ; তার কোনাে হিতাহিত জ্ঞান নেই। একজন জ্ঞানহীন ব্যক্তির আচরণ পশুর সাথে তুল্য। সেজন্য সকলেরই জ্ঞানার্জন করা প্রয়ােজন। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এ শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান যে লাভ করেছে তা একমাত্র তার জ্ঞান বুদ্ধির জন্য। বিচার বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার দ্বারা সে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়।
অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের তফাৎ এই যে, মানুষ কোনাে কিছু পর্যালােচনাপূর্বক বিবেক দিয়ে ভালােমন্দ চিহ্নিত করতে পারে। অন্যান্য জীবের মধ্যে এ উপাদানটি অবর্তমান। প্রকৃতিগতভাবে প্রতিটি মানুষের মধ্যে জ্ঞান সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করে। তবে অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে।
সুতরাং পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হলে প্রতিটি মানুষেরই জ্ঞানচর্চা করা অপরিহার্য। অন্যথায় তার বিবেক পূর্ণভাবে বিকশিত হবে না। যদি মানুষের সুপ্ত জ্ঞান বিকশিত না হয়, তাহলে সে হবে পশুর সমান। কারণ পশু জ্ঞানহীন ও নির্বোধ। তার বিবেকবুদ্ধি খুব কম। তাই তার সব চিন্তাভাবনা শুধু নিজেকে ঘিরেই। শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই তার কাজ। সেজন্য বড় পশু ছােটগুলােকে হত্যা করে আহার করে। জ্ঞানহীন মানুষও পশুর মতাে আচরণ করে।
জ্ঞানের আলাে পায় নি বলে স্রষ্টার সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীব হলেও তার বুদ্ধি বিকশিত হয় নি। তাই সে অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে আছে। সে নিজেকে চিনতে পারে নি ও মানুষ হিসেবে তার কর্তব্য কি তা বুঝে উঠতে পারে নি। তাই তার মাঝে পশুত্বই প্রাধান্য বিস্তার করেছে। ফলে সে স্বার্থান্ধ হয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পশুর মতাে আচরণ এবং ভাইয়ের বুকে ছুরি বসিয়ে ধন-প্রাণ ছিনিয়ে নিচ্ছে। এভাবে সে মনুষ্যত্বের অবমাননা করছে এবং পৃথিবীতে মানবজীবনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে দিচ্ছে।
এসব পশুর ন্যায় কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি পেতে হলে জ্ঞান অর্জনের কোনাে বিকল্প নেই। জ্ঞানই মানুষকে সৎ, সুন্দর এবং আদর্শবান রূপে গড়ে তােলে। মানুষকে পরিপূর্ণতা এনে দেয়। সুতরাং পৃথিবীর বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটোর ভাষায় বলা যায়,“ অজ্ঞ থাকার চেয়ে পৃথিবীতে না জন্মানােই ভালাে, কারণ, অজ্ঞতা সব দুর্ভাগ্যের মূল। ” আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (স) বলেছেন,“ সুদূর চীন দেশে গিয়ে হলেও জ্ঞানচর্চা কর। ” জ্ঞানহীন ব্যক্তি বর্বর। তার ভালােমন্দ জ্ঞান নেই। সে পশুর সমতুল্য। সে জ্ঞানের অভাবে এ পৃথিবীতে আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্ষম। সেহেতু সকলেরই জ্ঞানচর্চা করা উচিত।