ভাব-সম্প্রসারণ: কীর্তিমানের মৃত্যু নাই

কীর্তিমানের মৃত্যু নাই

অথবা,

মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নহে।

ভাব-সম্প্রসারণ: মানুষ মরণশীল হলেও কর্মগুণে অমরত্ব লাভ করা সম্ভব। বেঁচে থাকার মানে জৈবিকভাবে বেঁচে থাকা নয়, অমরত্ব লাভ করা। সংক্ষিপ্ত মানবজীবনকে অনন্তকাল বাচিয়ে রাখতে হলে তথা স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতে হলে কল্যাণকর কর্মের কোনাে বিকল্প নেই। মৃত্যু অনিবার্য, এটি চিরন্তন সত্য। তবুও মানুষ তাঁর সঙ্কর্মের মাধ্যমে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারেন। সেজন্য যাঁরা কীর্তিমান তারা তাঁদের সেবামূলক কাজের মাধ্যমে মানবসমাজে বেঁচে থাকেন বহু যুগ ধরে।

এ নশ্বর পৃথিবীতে সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ, কোনাে মানুষই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে না। সেজন্য দিন বেঁচে থাকা বড় কথা নয়, কারণ এতে তার অমরত্ব আসে না। মানুষ অমরত্ব পায় তার কর্মের মাধ্যমে। কর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে সাধারণ মানুষের অন্তরে চিরদিন। অর্থাৎ, যেসব মানুষ নিঃস্বার্থভাবে পরােপকারে আত্মনিয়ােগ করেন, মানুষের কল্যাণে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন— মৃত্যুর পরেও তাঁরা অমর হয়ে থাকেন মানুষের মাঝে।

এভাবে কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব তাঁদের সৎ কর্মের জন্য অমরত্ব প্রাপ্ত হন। এসব লােকের দৈহিক মৃত্যু হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা অমর। সর্বদাই তারা মানবের অন্তরে বিরাজ করেন। মানুষ তাঁদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের জীবনাদর্শই যুগ যুগ ধরে মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে। সুতরাং তাদের মৃত বলে মনে হয় না। মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মাধ্যমে, তার বয়সের জন্য নয়। কত কোটি কোটি মানুষ এ পৃথিবীতে এসেছে।

কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর কেউ তাদেরকে মনে রাখে নি। তারা ভেসে গিয়েছে কালস্রোতে। অথচ যেসব কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গ মানুষের সেবায় আত্মনিয়ােগ করে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা অমর। তাই সক্রেটিস, প্লেটো, গ্যালিলিও প্রমুখ কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের মৃত্যু হয়েছে বহুদিন পূর্বে কিন্তু তারা আজও চির ভাস্বর মানুষের হৃদয়ে। নশ্বর পৃথিবীতে মানুষ অবিনশ্বর হয় কর্মগুণে। কাজেই দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার মধ্যে সার্থকতা নেই, যদি তা হয় কর্মগুণহীন। এজন্যই বলা হয়েছে যে, মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়।

❤️ 1
👎 0
😢 0
😡 0

Leave a Reply

Scroll to Top