মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে
ভাব-সম্প্রসারণ: প্রচুর সম্পদের অধিকারী হয়ে বিলাসী জীবনযাপন করলেই ধনের অধিকারী বলে গণ্য হওয়া যায় না। পরােপকার, অন্যের মঙ্গল করার শক্তি সাহস যার আছে সেই প্রকৃত ধনের অধিকারী। মানুষ ধনার্জন করে, সম্পদের পাহাড় গড়ে তােলে, কিন্তু ধনের প্রকৃত তাৎপর্য সে জানে না। সাধারণভাবে বলা যায়, যে ধন সম্পদ সকলের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে লাগে সে ধনই প্রকৃত সম্পদ। যা বিলাস-ব্যসনে ব্যয়িত হয়, অন্যের বা সমাজের উন্নয়নে লাগে না সে ধনের কোনাে মূল্য নেই। ধনের সার্থকতা এর সদ্ব্যবহারে।
কিন্তু দেখা যায়, সমাজের অধিকাংশ ধনী ব্যক্তিই বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে অর্থ ব্যয় করে থাকে। ফলে বিপুল পরিমাণে অপব্যবহার ও অপব্যয় হচ্ছে ধনের। ধনের সত্যিকার মূল্যায়ন হবে তখনই যখন তা জনসাধারণের কল্যাণ সাধনে ব্যয় হবে। সমাজে অর্থ উপার্জন অনেকেই করে। সেই অর্থ বিলাস-ব্যসনে ব্যয়ও করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তা অর্থের অপব্যবহার মাত্র। বিলাসিতায় ব্যয়িত অর্থ বিশেষ খেয়াল চরিতার্থ করে বটে, কিন্তু এর দ্বারা বিন্দুমাত্র পরােপকার সাধিত হয় না। ধন দুঃস্থ মানবতার সেবায় জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারতা সাধনে, জগতে মঙ্গল করার শক্তি যােগায়।
মঙ্গল করার শক্তির উৎস হিসেবে ধনের প্রয়ােজন অপরিহার্য। শুধু নিজের আরাম-আয়েশের জন্য, বা অন্য কোনাে বিশেষ খেয়াল চরিতার্থ করার জন্য অর্থ ব্যয় করলে তা নিছক স্বার্থপরতা ছাড়া কিছুই। কাজেই মানুষের মঙ্গলের জন্য ব্যয়িত অর্থই যথার্থ ধন। তবে প্রকৃত অর্থে সম্পদকে সুপরিকল্পিতভাবে সমাজের ও অর্থহীনদের জন্য ব্যয় করা খুবই কঠিন, অর্থ উপার্জন যত সহজ, সদ্ব্যবহার তত সহজ নয়। তাই বলা হয়- “ মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে।” অপরের মঙ্গল কামনা না করলে, অপরের বিপদে সাহায্য না করলে সে প্রকৃত সম্পদের অহংকার করতে পারে না; বরং অর্থ তার জন্য অনর্থ ডেকে আনতে পারে।