বাংলা রচনা
বাংলাদেশের কৃষি
ভূমিকা:
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এ বাংলাদেশের খেতে-খামারে যে কৃষিদ্রব্য উৎপন্ন হয়, তার সঙে সমগ্র দেশবাসীর ভাগ্য জড়িত। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ জন কৃষিজীবী। এদেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সম্পূর্ণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল । তাই কৃষককে বলা হয় এদেশের মেরুদণ্ড ।
বাংলাদেশের কৃষিতে কৃষকের অবদান :
বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃষি ও কৃষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় আয় বৃদ্ধি, খাদ্য চাহিদা পূরণ, পুষ্টি সমস্যা সমাধান, শিল্পায়ন, রপ্তানি আয় রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষি ও কৃষকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান অবস্থা:
সাম্প্রতিক কালে উচ্চফলনশীল বীজের সাহায্য, ব্যাংক ও সমবায়ের ঋণ বিতরণের ফলে এবং মহাজনের ঋণের টাকায় কৃষির ফলন বৃদ্ধি ঘটেছে। তার ওপর কৃষিপণ্যের মূল্যানুকুলের ফলে কৃষিকর্মের প্রসার ঘটেছে। কিন্তু ক্ষেতের ফসল ওঠার সঙে সঙে মহাজনদের দেনার দায়ে সে ফসল বিক্রি করতে হয় নামমাত্র মূল্যে । ফলে সুখ-স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা । কৃষি বাংলাদেশের প্রধান অবলম্বন হলেও এখানকার কৃষকের অবস্থা শোচনীয়।
বাংলাদেশের কৃষিতে বিরাজমান সমস্যা:
বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষিকার্য পদ্ধতির দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কৃষিকার্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে উন্নত দেশগুলোতে । কিন্তু আমাদের দেশে তেমন কোনো উন্নতি করা আজও সম্ভবপর হয় নি। আমাদের দেশে লোকসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ খুবই কম। তদুপরি কৃষকরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাই আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বন্ধে তারা বেশির ভাগই অজ্ঞ। বাংলাদেশের জমিতে পানিসেচের উন্নত ও পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা নেই।
এখনও অনাবৃষ্টির সময় আকাশের দয়ার দিকে চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকতে হয়। ক্রমাগত একই চাষের ফলে জমির উর্বরতা কমে যায়। দারিদ্রের অভিশাপে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ঔষধ কিংবা উন্নতমানের সার ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি বছরের বন্যা কৃষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলেছে। এসব কারণে আমাদের কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। অশিক্ষার কারণে তাদের মাঝে এখনও অনেক কুসংস্কার-বিরাজ-করছে। জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি তাদের পরিবারকে যেমন আয়তনে বড় করছে তেমনি চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসেবে মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চরম দারিদ্র্য মোকাবেলা করতে গিয়ে তাদের প্রায়ই নিজেদের জমি অন্যের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি অথবা বন্ধক দিতে হচ্ছে। যে কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে কৃষক সম্প্রদায়।
দুর্দশা দূরীকরণের উপায়:
কৃষির উন্নতির জন্যে অবিলম্বে যথার্থ ভুমি সংস্কারের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে জমি তুলে দিয়ে উন্নত কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা উচিত। কৃষকদের দুরবস্থা লাঘর করতে হলে সর্বাগ্রে কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ব্যাপক ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। তাই কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় কৃষক সম্প্রদায়কে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। কৃষকের উন্নতির জন্যে সুষ্ঠু সরকারি নীতিমালা গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
বন্যার পানি যেন ফসলের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্যে নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ এবং নদী খননের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে সরকার বুঝতে পেরেছেন, গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ছাড়া দেশের উন্নতি অসম্ভব । তাই পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা চলছে। সরকার নতুনভাবে ভূমি সংস্কারের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। চাষিদের হাতে জমির মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে চাষের জমিতে তাদের প্রতিষ্ঠিত করার কাজ চলছে। চলছে বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষের উপকারিতা কৃষকদের সামনে তুলে ধরার কাজ। সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় সার, কীটনাশক ঔষধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির সরবরাহ কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে; উত্তম সেচ-ব্যবস্থা ও বন্যা-নিরোধ প্রকল্পের কর্মসূচি গ্রহণ কৃষকদের জীবনকে করেছে নতুন প্রত্যয়ে আশাবাদী ।
উপসংহার:
আমাদের জাতীয় উন্নয়ন বহুলাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং কৃষকরাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তির মেরুদণ্ড, বাংলাদেশের প্রাণস্বরুপ। সেই প্রাণ ছিল এতকাল অনাদৃত, ছিল উপেক্ষিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এদের ওপর চলেছে নির্বিচারে অত্যাচার। মনুষ্যত্ব হয়েছে নিত্য নিগৃহীত। সেই লাঞ্ছনার দিনের অবসান ঘটাতে হবে। এখন শুরু হয়েছে সে আয়োজন । আমাদের কৃষকদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে এবং কৃষির বৈপ্লবিক রূপান্তরের জন্যে আজ সমগ্র জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে।