তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি
কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ
ভাব-সম্প্রসারণ: সৃষ্টিজগতের সব কিছুই জন্মগতভাবে নিজ বৈশিষ্ট্যে আপনার পরিচয় বহন করে। তবে মানুষকে তার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। কঠিন সাধনায় নিজেকে প্রকৃত মানুষ করতে হয়। তবেই মানবজীবন সার্থকতা পায়। পৃথিবীকে বিধাতা বিচিত্র বর্ণে চিত্রিত করেছেন।
গাছপালা সৃষ্টি করে এ ধরাকে শ্যামল সুষমা দিয়েছেন। পশুপাখি সৃষ্টি করে স্রষ্টার মহত্ত্ব ও গৌরব প্রকাশ করেছেন। মানুষ সৃষ্টির ভেতর দিয়ে বিধাতা পৃথিবীকে পূর্ণতা দিয়েছেন। মানুষের কল্যাণে অন্যান্য সৃষ্ট জীব, শস্যাদি ও বৃক্ষলতার সৃষ্টি। স্রষ্টার সৃষ্টি এসব তরুলতা ও পশুপাখির আত্মার বৃদ্ধি নেই ও বুদ্ধির বিকাশ নেই, কিন্তু মানুষের বুদ্ধি আছে, বিবেক আছে। সে তার অস্তিত্বের জন্য সকল বিরুদ্ধ শক্তিকে পদদলিত করে অগ্রসর হয়। তাকে এজন্য নিরন্তর কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়।
মানব মনে পাশবিক শক্তি লুক্কায়িত থাকে। তাই তাকে সভ্য সমাজের উপযােগী ও যথার্থ মানুষ হতে হলে পাশব প্রবৃত্তি ত্যাগ করে সুকুমার বৃত্তির উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করতে হয়। এর জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। মানুষের মতাে মানুষ হতে হলে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার দরকার। তরুলতা, পশুপাখি স্বাভাবিক নিয়মেই বর্ধিত হয়ে পূর্ণতা লাভ করে; এর জন্য এদের নিজস্ব কোনাে শ্রমের প্রয়ােজন হয় না।
কারাে সাহায্যের ধার ধারতে হয় না। তরুলতা বা পশুপাখিকে স্বীয় কর্ম বা ত্যাগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে হয় না। কিন্তু মানুষকে অক্ষয় কীর্তি যাপন করতে হলে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হয়। কাজেই যথার্থ মানুষ হওয়ার ব্যাপারটি সহজ নয় এবং কুসুমাস্তীর্ণ তাে নয়ই। মানুষ জন্মগতভাবেই ‘ মানুষ’ নয়। কঠিন সাধনায় মানুষ হতে হয়। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সকল বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে সভ্যতার আলোেক শিখা জ্বালাতে পারলেই যথার্থ মানুষ হওয়া সম্ভব।