কাঁটাবনের গােলাপই সত্যিকারের গােলাপ
অথবা,
কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?
ভাব-সম্প্রসারণ: অনায়াসে লন্ধ কোনাে জিনিসের চেয়ে কষ্টে প্রাপ্ত জিনিসের মূল্য অনেক বেশি। কঠিন বাস্তবতার পথ পাড়ি দিয়ে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে যে আরােহণ করতে পারে সেই পায় প্রকৃত জীবনের আস্বাদ। কষ্টে কোনাে কিছু অর্জন করলে তার মূল্যায়ন হয় বেশি। কাটার আঘাতে রক্ত ঝরিয়ে কাঁটা বন থেকে গােলাপ ফুল সংগ্রহ করায় যে, আনন্দ, তার তুলনা নেই। কিন্তু যে গােলাপ নাগালের কাছেই ফুটে থাকে, যাকে যখন তখন হাত বাড়ালেই তুলতে পারা যায় সেটা অতটা আনন্দ সৃষ্টি করতে পারে না।
কিন্তু প্রচুর পরিশ্রমের মাধ্যমে যা অর্জন করা যায় তা পেয়ে মানুষ দারুণ আনন্দ অনুভব করে। যে ছাত্র কঠোর পরিশ্রম করে ভালাে রেজাল্ট করে তার আনন্দের সীমা থাকে না। আমাদের চলার পথ উপল বিছানাে, কণ্টকাকীর্ণ, সংগ্রামে ভরপুর। সাহসী যােদ্ধর মতাে জীবনসংগ্রামে যারা অবতীর্ণ হয় তারাই সফলতা অর্জন করতে পারে; তাদের গলায়ই শােভা পায় বিজয়ের মাল্য। তারাই সাফল্যের মুখ দেখতে পারে।
আর যারা সােনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যারা উত্তরাধিকারসূত্রেই প্রচুর সম্পদের অধিকারী, যারা না চাইতে অনেক কিছু পায় তারা জীবনের আসল অর্থ বুঝতে পারে না। কঠিন বাস্তবতার আশ্রয়ে যে জীবন গঠিত, জীবনের স্বাদ থেকে সে পুরােপুরি বঞ্জিত। প্রাচুর্য আর অর্থ তাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষা। তারা শুধু সুখের পায়রার মতাে জীবন যাপন করে। ভােগ বিলাস আনন্দের মধ্যেই তাদের জীবন। কষ্ট বা দুঃখের জীবন তাদের কাছে ধরা দেয় না। কীভাবে একজন কৃষক ধান জন্মাল তা না ভেবেই তারা ধানের চাউল থেকে ভাত খায়। পরগাছার মতাে তারা সমাজে বেড়ে ওঠে। জীবনে তাদের গৌরব করার কিছুই নেই। কিন্তু একজন কৃষকের তা আছে।
যারা বহু চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে, বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে জীবনের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে পারে তারাই আদর্শ মানুষ। গর্ব করার অধিকার শুধু তাদের। অল্প পরিশ্রমে ধনীরা পায় কোটি কোটি টাকা। আর সারাদিন পরিশ্রম শেষে গরিব শ্রমিকেরা যখন দুটো অন্ন যােগাড় করার মতাে টাকা পায় তখন তাদের খুশির সীমা থাকে না। তারা পরগাছা নয়। তাদের শিকড় অনেক গভীরে। বাস্তবতার সংগ্রামে তারাই টিকে থাকবে। সুখী, শ্রমবিমুখ, পরনির্ভরশীল মানুষেরা জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পায়। সংগ্রামে অর্জিত জীবন খুঁজে পায় প্রকৃত আনন্দ। অর্থাৎ কাঁটাবনের গােলাপাই সত্যিকারের গােলাপ- একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।