স্বদেশের উপকারে নাই যার মন
কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন।
ভাব-সম্প্রসারণ: মা, মাতৃভূমি, মাতৃভাষা প্রত্যেকের একান্ত আপনার ধন। আর এসবকে যে অবজ্ঞা করে সে কখনাে প্রকৃত মানুষের মর্যাদা পায় না। তার মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না। দেশপ্রেম প্রতিটি মানুষেরই একটি একান্ত অনুভূতি। প্রত্যেক মনীষীই জন্মভূমিকে সর্বাগ্রে ভালােবাসার স্থান দিয়েছেন। কোনাে এক দেশপ্রেমিক বলেছেন,“ জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী। ” অর্থাৎ, মা আর মাতৃভূমিকে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন। জন্মের পর হতেই প্রতিটি মানুষের মাঝে নিজের অজান্তেই দেশপ্রেম গড়ে ওঠে। কেননা শৈশব হতেই প্রাণের সাথী হয়ে ওঠে জন্মভূমি।
তাই প্রতিটি মানুষের নিকটই জন্মভূমি অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে। এ স্বদেশের উপকার বা দেশকে রক্ষা করার জন্যে কত লােক যে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তার কোনাে হিসেব নেই, দেশের জন্য জীবন দিয়ে মানুষ রিক্ত হন না বরং হন তারা ধন্য। তারা কখনাে মরেন না। শহিদ হয়ে অমর হয়ে থাকেন। যেমন— অমর হয়ে আছেন রফিক, সফিক, বরকত, সালাম এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর শহিদেরা বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার মানসে সবার জীবন গড়ে তােলা উচিত। স্বদেশের উপকার করতে গিয়ে মনের সংকীর্ণতা দূর করতে হবে।
জন্মভূমির মঙ্গল মানুষ মাত্রেই অবশ্য করণীয়। স্বদেশের উপকার এবং কল্যাণের জন্যে যার মন নেই সে ঘৃণ্য। দেশপ্রেম সকল মহত্ত্বের উৎস, মনুষ্যত্বের প্রসূতি। যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই, স্বদেশের হিতার্থে যে হিতাকাক্ষী নয় সে পশুর চেয়েও অধম। তাকে দিয়ে কোনাে মহৎ কাজ সাধিত হয় না। সে মানুষ নয় পশু সমতুল্য। স্বদেশের সম্মান, স্বাধীনতা, কৃষ্টি, আচার, সভ্যতা ও ভাষার জন্য যাঁরা জীবন দিতে পারেন তারাই মানুষ। কেননা স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। নিজের দেশকে অবজ্ঞা করে কেউ কোনােদিন বড় হতে পারে নি। শত দুঃখ লাঞ্ছনার মাঝে থেকে আবার ফিরে আসতে হয়েছে স্বদেশের আঙিনায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য নিজের মাতৃভূমিকে ভালোবেসে তার সমৃদ্ধি সাধনে সচেষ্ট থাকা।